জমায়েত: মানিককুণ্ডুতে গ্রামসভা। নিজস্ব চিত্র
ছ’মাসেই পাল্টে গিয়েছে ছবিটা। বছরের শেষে প্রায় নিয়মিতই বসছে গ্রাম সংসদ সভা। হচ্ছে গ্রামসভাও। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। এতে খুশি গ্রামের মানুষও।
নিয়মমতো বছরে দু’বার গ্রাম সংসদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জুন মাসে, আর দ্বিতীয়বার বছরের শেষে নভেম্বরে। চলতি বছরে জুন নাগাদ তৃণমূল-বিজেপি সংঘাতের জেরে নানা প্রান্তেই অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। তারপরই রাজ্য সরকারের নির্দেশে সংসদ সভা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বছরের শেষের নির্দিষ্ট গ্রামসভা বেশিরভাগ জায়গাতেই হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ছবিটা অন্তত এমনই। তথ্য বলছে, ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকে সংসদ সভা ও গ্রামসভাগুলিতে কমবেশি ৭০ শতাংশ মানুষ উপস্থিত থাকছেন। জেলাশাসক রশ্মি কমলও মানছেন, “জেলা জুড়ে গ্রাম সংসদ সভা হচ্ছে। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। গ্রামসভাও বসছে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গত জুন মাসে যে সময় রাজনৈতিক অশান্তির জেরে রাজ্য জুড়ে গ্রাম সংসদ সভা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার, সেই সময় লোকসভা ভোটে শক্তি বাড়িয়ে চাঙ্গা হয়েছে গেরুয়া শিবির। ফলে, নানা স্থানে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছিল গেরুয়া শিবির। গ্রামসভাগুলিতেও উঠে আসছিল তৃণমূল বিরোধী স্বর।
এখন অবশ্য হাওয়া ঘুরেছে। সদ্য সমাপ্ত উপ-নির্বাচনে তিনটি আসনেই জয় তৃণমূলকে চাঙ্গা করেছে। কিছুটা ব্যাকফুটে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতেই প্রশাসন ফের গ্রামসভা আয়োজন করছে বলে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা। বিজেপির ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “তৃণমূল ভয়ে সভা বন্ধ করে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষ সে ব্যাপারে অবগত।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি পাল্টা বলছেন, “সংসদ সভায় গ্রামের মানুষ নিজেরাই উন্নয়নের পরিকল্পনা করেন। গতবার তা করতে দেয়নি বিজেপি। এখন আবার চেনা ছন্দে সংসদ সভা বসছে।”
কয়েকদিন আগে চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের মানিককুণ্ডু পঞ্চায়েত অফিসে গ্রামসভা বসেছিল। উপপ্রধান দিলীপ চক্রবর্তী বলছিলেন, “জুন মাসে সংসদ সভা করা যায়নি। তবে ক’দিন আগে গ্রামসভায় সাত-আটশো লোক উপস্থিত হয়েছিলেন। সুন্দর ভাবে সব কিছু আলোচনা হয়েছে।” ঘাটাল ব্লকের আজবনগর পঞ্চায়েতের গ্রামবাসীদের একাংশও বলছেন, “গতবার সংসদ সভায় আমাদের কথা শোনা হয়নি। গোলমালে সভা পণ্ড হয়। এ বার সেই ঘাটতি পূরণ হয়েছে।’’
সংসদ সভায় আগামী এক বছরে এলাকার সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সভায় উপস্থিত গ্রামবাসীর কাছ থেকেই উঠে আসে এলাকার চাহিদা। সেই মতো রাস্তাঘাট, পানীয় জল, একশো দিনের কাজ, শৌচালয়, হাসপাতাল, স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি, নিকাশি, স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত নানা কাজের পরিকল্পনা করা হয়। সংসদ সভা থেকে পরিকল্পনা
নেওয়ার পরে গ্রাম সভায় সেই সব পরিকল্পনা মাফিক কাজের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন গ্রামবাসী।
এ বার জুনের সভা না হওয়ায় তো উন্নয়ন পরিকল্পনা ধাক্কা খাবে? ঘাটতি পূরণ হবে কী ভাবে?
জেলাশাসক বলছেন, “জুন মাসে যেখানে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা আগামী অর্থবর্ষে রূপায়িত হবে। আর যেখানে তখন সভা হয়নি, সেখানে এ বারের সভায় পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেটুকু ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করে ফেলা হবে।”