রাগে কম নম্বর, বিক্ষোভে ভুল কবুল প্রধান শিক্ষকের

দাসপুরের এই স্কুলের একাংশ ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নির্মল দাস কর্মকার ইচ্ছে করে কয়েকজনের প্রজেক্টের নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদদাতা

দাসপুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০০:৫৬
Share:

ঘেরাও: প্রধান শিক্ষককে (চিহ্নিত) ঘিরে বিক্ষোভ দাসপুরের স্কুলে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

রাগের বশে ইচ্ছে করে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রজেক্টের নম্বর কমিয়ে দিয়েছে প্রধান শিক্ষক— এমনই অভিযোগে তোলপাড় হল দাসপুরের জোতঘনশ্যাম নীলমণি হাইস্কুল। বিক্ষোভের জেরে লিখিত ভাবে ভুল কবুলও করেছেন প্রধান শিক্ষক।

Advertisement

টানা ছুটির পরে সোমবারই খুলেছে স্কুল। কিন্তু গেট আটকে বিক্ষোভের জেরে এ দিন আর এই স্কুলে পঠনপাঠন হয়নি। ঘটনা জেনে খোঁজ নিয়েছেন জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরের স্কুল পরিদর্শক অমরকুমার শীল বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

স্কুল থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রজেক্টের নম্বর দেওয়া হয়। প্র্যাকটিক্যাল নেই এমন বিষয়গুলিতে ১০০-র মধ্যে ২০ নম্বর থাকে প্রজেক্টে। স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর-সহ কাউন্সিলে পৌঁছয় সেই নম্বর। মার্কশিটে তারই উল্লেখ থাকে।

Advertisement

দাসপুরের এই স্কুলের একাংশ ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নির্মল দাস কর্মকার ইচ্ছে করে কয়েকজনের প্রজেক্টের নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন। তাতে মোট নম্বরও অনেকটা কমে গিয়েছে। দু’শো জনের মধ্যে প্রায় ৪৫ জন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ার ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগকারী পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদেরর দাবি, প্রজেক্টে নম্বর কম হওয়ায়, তাঁরা বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই জানা যায়, ওই শিক্ষকেরা নির্ধারিত ২০ নম্বরের মধ্যে ভাল নম্বরই দিয়েছেন। কিন্তু কাউন্সিলে সেই নম্বর পৌঁছয়নি। নিয়মমতো প্রধান শিক্ষকই মুখবন্ধ খামে ওই নম্বর কাউন্সিলে পাঠান। তাই অভিযোগের আঙুল ওঠে প্রধান শিক্ষকের দিকেই।

এ দিন স্কুল খুলতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রধান শিক্ষককে স্কুলে ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে চলে বিক্ষোভ। স্কুলের সামনের রাস্তায় প্রধান শিক্ষককে ঘোরানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ছড়ানো হয় লিফলেট। পরে কোনও রকমে তিনি বাড়ি ফেরেন।

ওই প্রধান শিক্ষক ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, কিছু ছাত্রের ‘বেয়াদপি’ বরদাস্ত করতে না পেরেই তিনি এমনটা করেছেন। লিখিত ভাবে নিজের দোষের কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, শংসাপত্র, ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে টাকা নেওয়া, ফি বাড়িয়ে দেওয়া, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ছিল ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কিছু ছাত্র এর প্রতিবাদ করে। সেই রাগ থেকেই তিনি নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক নির্মল নিজেও বলছেন, “এটা আমার ভুল।আমি পড়ুয়াদের কাছ ক্ষমা চাইছি।”

এই পরিস্থিতিতে প্রজেক্টের নম্বর পুনর্বিবেচনার জন্য কাউন্সিলে জানানো হয়েছে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শ্রীবাস জানা বলেন, “স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক প্রজক্টের নম্বর নিয়ে একটা অঘটন ঘটেছে। শিক্ষা দফতর, কাউন্সিলেও তা জানানো হয়েছে।” কিন্তু নম্বর বাড়ানো সম্ভব নয় বলেই কাউন্সিল সূত্রে খবর।

এই অবস্থায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। উনি আবার স্কুলে আসুন পড়ুয়ারা চাইছে না। শিক্ষা দফতরের ভেবে দেখা উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন