প্রতীকী ছবি।
বিডিও বসবেন। তাই ইংরেজ আমলের কাছারি বাড়ির মেঝে ভেঙে কংক্রিটের পিলার তুলে তৈরি হচ্ছে ঘর। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লক অফিসে এই নির্মাণ কাজ ঘিরে আপত্তি তুলছেন স্থানীয়রা। তাঁদের মত, এতে কয়েকশো বছরের পুরনো ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইংরেজ আমলের ওই কাছারি বাড়িতেই রয়েছে বেলপাহাড়ির ব্লক অফিস। সেখানে বারান্দা লাগোয়া একটি ঘরে এখন বিডিও বসেন। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন যা বন্দোবস্ত তাতে বহিরাগতরা হুটহাট করে বিডিও-র সঙ্গে দেখা করতে ঢুকে পড়েন। কিন্তু বেলপাহাড়ির মতো এক সময়ের মাওবাদী ঘাঁটিতে বিডিও-র ঘর আরও সুরক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া বিডিও-র পুরনো ঘরটি অপরিসর। তাই ব্লক অফিসের অ্যাকাউন্ট সেকশনে তৈরি হচ্ছে বিডিও-র নতুন অফিস ও অ্যান্টিচেম্বার। আর তার জন্য মেঝে ভেঙে ১০ ফুট উঁচু পিলার তুলে ছাদ ঢালাই করা হচ্ছে।
এই ভবনটি যে ঐতিহ্যের তা নিয়ে বিশেষ সংশয় নেই। মেদিনীপুরের ইতিহাস নিয়ে চর্চা চালানো প্রবীণ লোকসংস্কৃতি গবেষক মধুপ দে জানালেন, ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে মিরজাফর দ্বিতীয়বার বাংলার নবাব হওয়ার পরে শিলদা পরগনার অন্তর্গত বেলপাহাড়ির বিস্তীর্ণ অংশ চলে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশরাজ নিয়ন্ত্রিত ‘মেদিনীপুর জমিদারি কোম্পানি’র অধীনে। ১৮৫০ সালে বেলপাহাড়িতে বিশাল এলাকা জুড়ে ইংরেজ জমিদারদের এই কাছারি বাড়ি তৈরি হয়। কাছারি বাড়ির কিছুটা দূরে এখনও রয়েছে নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ। মধুপবাবুর কথায়, “এই ভবনটি দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো। এ ভাবে তার পরিবর্তন করা ঠিক নয়।”
এ বিষয়ে একমত তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বও। তৃণমূল পরিচালিত বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবদন মাহাতো এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে এলাকার তৃণমূল কর্মী সিদ্ধেশ্বর পাইনের মতো অনেকেই ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, “ভবনটির পরিবর্তন করে ইতিহাস ও পুরনো ঐতিহ্যের ক্ষতি করা হচ্ছে।” বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “অবিলম্বে নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছি। নাহলে আমরা ব্লক অফিসের সামনে অবস্থানে বসব।” সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা আহ্বায়ক ডহরেশ্বর সেনেরও মন্তব্য, “ঐতিহাসিক ভবনকে এভাবে বিকৃত করা আমাদের দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আমরা প্রতিবাদ-কর্মসূচি করব।”
বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদার অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। তাঁর দাবি, মূল ভবনের ছাদ বা দেওয়ালের কোনও ক্ষতি করা হচ্ছে না। মূল ভবনের ছাদের উচ্চতা ২০ ফুট। সেখানে দশ ফুট উঁচু অফিসঘর করা হচ্ছে। ওই ঘরের উপরে আরও দশ ফুট উঁচু প্রশস্ত জায়গাটি রেকর্ড রুম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আর ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক (সদর) নকুলচন্দ্র মাহাতোর যুক্তি, “ব্লক অফিসের ভবনটি ইংরেজ আমলের হলেও সেটি ঘোষিত হেরিটেজ নয়। তাই অফিসের প্রয়োজনে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।’’ তাও এলাকাবাসীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস তাঁর।