প্রতীকী ছবি।
‘ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন’ (ইউজিসি) বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষার অনুমোদন বাতিল করায় সমস্যায় পড়তে চলেছেন বহু পড়ুয়া। সবদিক দেখে ইউজিসি-র কাছে ফের দূরশিক্ষার অনুমোদন দেওয়ার আবেদন জানাতে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই আবেদন জানাতে শীঘ্রই দিল্লি যেতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল।
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যের চার বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষার অনুমোদন বাতিল করেছে ইউজিসি। এরমধ্যে রয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এখন যাঁরা দূরশিক্ষায় পড়াশোনা করছেন, তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না। এ বছর এখনও পর্যন্ত দূরশিক্ষায় ছাত্র ভর্তি নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। অনুমোদন বাতিলের ফলে আর নতুন করে ছাত্র ভর্তি নেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “ইউজিসি-র কাছে আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আশা করি, ইউজিসি আবেদন খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবে।”
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তরে প্রতি বছর ৪-৫ হাজার পড়ুয়া ভর্তি হন। পাঠ্যক্রম দু’বছরের। অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যা ৮- ১০ হাজার। আগে ১৪টি বিষয়ে পড়ানো হত। এখন ১৩টি বিষয়ে পড়ানো হয়। নতুন করে আরও ২টি বিষয় চালুর অনুমতি দেওয়ার জন্য ইউজিসি-র কাছে আবেদনও জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এক সময় রাজ্য জুড়ে বিদ্যাসাগরের দূরশিক্ষার ৫৪টি ‘স্টাডি সেন্টার’ ছিল। এখন অবশ্য ৪৭টি ‘স্টাডি সেন্টার’ রয়েছে।
ইউজিসি জানিয়েছিল, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠ্যক্রম ও দূরশিক্ষা পাঠ্যক্রম চালানো হয়, সেগুলো ‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ নাক-এর মূল্যায়নে ৩.২৬ নম্বর না পেলে দূরশিক্ষা চালাতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনে আসেন নাক-এর সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো ও সমস্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে নাক-এর সদস্যরা নম্বর দেন। মাস কয়েক আগে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নাক-এর থেকে ৩.২৬ নম্বর পেতে হবে। না হলে দূরশিক্ষার পাঠ্যক্রম চালানো যাবে না।
পরে ইউজিসি জানায়, যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় নাক-এর থেকে ৩.২৬ নম্বর পাবে না তারা দূরশিক্ষা চালাতে পারবে না। পরবর্তী সময়ে এই নম্বরের বিষয়টি থেকে সরে গিয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের শর্ত আরোপ করে ইউজিসি। অনুমোদন বাতিলের পরে অবশ্য ইউজিসি এক মাসের মধ্যে ফের আবেদনের সুযোগ রেখেছে। সেই মতো ইউজিসি-র কাছে দূরশিক্ষার অনুমোদন দেওয়ার আবেদন করতে চলেছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের অধিকর্তা প্রকাশচন্দ্র ধাড়া বলেন, “ইউজিসি-র নির্দেশ মেনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। তা ইউজিসি-কে জানানোও হয়েছিল।” বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের স্বীকারোক্তি, “দূরশিক্ষায় শিক্ষক কম ছিল। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তাও কেন ইউজিসি দূরশিক্ষার অনুমোদন বাতিল করল বুঝতে পারছি না।”
দূরশিক্ষার অনুমোদন বাতিল হওয়ায় সমস্যায় পড়তে চলেছেন অনেক পড়ুয়া। দূরশিক্ষায় সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর পড়েছেন সুব্রত চক্রবর্তী। এখন এক বিএড কলেজে পড়ান তিনি। তাঁর কথায়, “দূরশিক্ষা চালু থাকলে অনেকেরই সুবিধে। চাকরি করতে করতেও পড়া যায়। অনেকে নিয়মিত পাঠ্যক্রমে পড়ার সুযোগ পায় না। তারাও দূরশিক্ষায় পড়তে পারে।” শালবনি সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শান্তনু ধর বলেন, “দূরশিক্ষা বন্ধ হওয়ার ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী সঙ্কটে পড়বেন।” তাঁর কথায়, “অনেকে চাকরি করতেন। তার ফাঁকেই দূরশিক্ষায় পড়াশোনা করতেন। এ বার সেই সুযোগ আর থাকছে না। এটা সমস্যারই।”