আজ বিশ্ব এড্‌স দিবস

সংক্রমণ বাড়ছে জেলায়

এড্স প্রতিরোধে নানা সচেতনতা প্রচার যে তেমন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি তার প্রমাণ মিলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সম্প্রতি স্বাস্থ্যশিবিরে সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষার পরে দুই এইচআইভি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৭
Share:

বন্ধন। বুধবার মেদিনীপুর ডিএভি পাবলিক স্কুলে।—সৌমেশ্বর মণ্ডল।

এড্স প্রতিরোধে নানা সচেতনতা প্রচার যে তেমন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি তার প্রমাণ মিলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সম্প্রতি স্বাস্থ্যশিবিরে সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষার পরে দুই এইচআইভি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে।

Advertisement

সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরে ১০টি এলাকায় এই শিবির হয়। দাসপুর ১, দাসপুর ২, ঘাটাল প্রভৃতি এলাকায় শিবিরগুলিতে ১১,৮৬২ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। পুরুষ ৫,০৯৬, মহিলা ৬,৭৬৬। এর মধ্যে দুই যুবকের রিপোর্ট দেখতে গিয়ে নড়েচড়ে বসেন জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারা। দেখা যায়, ওই দু’জন এইচআইভি আক্রান্ত। দু’জনের বয়সই তিরিশের আশপাশে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সংক্রমিতদের গোপনে কাউন্সেলিং করে চিকিত্সা করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।” উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এই নিয়ে প্রয়োজনে আরও সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে হবে।”

একটা সময় পশ্চিম মেদিনীপুরে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৪০, এখন সেই সংখ্যাটা ২২৩২। জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তা মানছেন, “এ সময়ের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এটা উদ্বেগজনক।” জেলায় এখন শতাধিক যুবক-যুবতী এবং কিশোর-কিশোরী রয়েছে যারা এইচআইভি আক্রান্ত।”

Advertisement

কেন সংখ্যাটা বাড়ছে? তাহলে কি সচেতনতা প্রচারের ঢাক পেটানোই সার? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার যুক্তি, “আগে এত শিবির হত না। এখন বেশি শিবির হচ্ছে। তাই নতুন সংক্রমিতের খোঁজ মিলছে।” তাঁর কথায়, “এখন প্রত্যন্ত এলাকায় এ নিয়ে প্রচার হচ্ছে। শিবির হচ্ছে। মানুষ যত এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হবেন, এ সব তত কমবে।”

শুধু সরকারি উদ্যোগে নয়, সম্প্রতি বেসরকারি উদ্যোগে জেলার ৬টি জায়গায় স্বাস্থ্যশিবির হয়। এই ৬টি শিবিরে ৪,৩১৬ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার কথায়, “দেখা গিয়েছে, যে সব এলাকার যুবকেরা ভিন্ রাজ্যে যান, ক’মাস কাটিয়ে ফিরে আসেন, সে সব অঞ্চলে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।” পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটালের দাসপুর ১, দাসপুর ২, ঘাটাল ব্লকে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, কারণ এই সব এলাকার প্রচুর মানুষ কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে যান।

এইচআইভি আক্রান্তদের একাংশ কিশোর-কিশোরী—এ তথ্যটি সত্যিই উদ্বেগের বলে মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁরা জানান, এইচআইভি আক্রান্তকে চিহ্নিত করার কাজের জন্য জেলায় ১৪টি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং টেস্টিং সেন্টার আছে। যদি কেউ জানতে পারেন যে তিনি সংক্রমিত, তা হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ে মানুষ দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে পারেন। তবে চিকিত্সা শুরু করা জরুরি— এটা মনে রাখতে হবে।

এড্স নিয়ে সচেতনতা প্রচারের ঢাক পেটানোই কি সার হয়ে দাঁড়াচ্ছে? জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “অনেকেই এই ধরনের রোগ লুকিয়ে রাখেন। শিবিরে রক্ত পরীক্ষারয় তাঁদের খোঁজ মিলছে। সচেতনতায় জেলায় নানা কর্মসূচি হয়। তার প্রভাবও পড়ছে।”

বছর ঘুরে ফের হাজির বিশ্ব এড্স দিবস। আজ, বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরেও সচেতনতায় পদযাত্রা, আলোচনা সভা হবে। কিন্তু উদ্বেগের ছবিটা কবে পাল্টাবে, প্রশ্ন উঠছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন