ডেঙ্গি ঠেকাতে পুরকর্মীদের ছুটি বাতিল

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরেও ৬ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। মশা দমনে যথাযথ পদক্ষেপই করা হচ্ছে বলে দাবি পুরসভার। যদিও অভিযোগও রয়েছে বিস্তর।

Advertisement

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩১
Share:

পানীয় জলের কলের অব্যবহৃত গর্তে জমে আছে নোংরা জল। মেদিনীপুর পাটনাবাজারে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরেও ৬ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। মশা দমনে যথাযথ পদক্ষেপই করা হচ্ছে বলে দাবি পুরসভার। যদিও অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বার পুরকর্মীদের ছুটির দিনেও কাজ করার নির্দেশ দিল পুরসভা।

Advertisement

পুরসভা নড়েচড়ে বসলেও শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, সীমিত পরিকাঠামো দিয়ে মশা দমনের কাজে কতটা অগ্রগতি সম্ভব। মেদিনীপুর পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ড। অথচ মশা মারার তেল স্প্রে করার যন্ত্র রয়েছে মাত্র আটটি। এই যন্ত্রগুলি রোজ সর্বক্ষণ কাজ করলেও গোটা শহরে একবার মশার তেল স্প্রে করতে একমাস সময় লাগবে। সমস্যা বুঝে এ বার প্রতি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের একটি করে স্প্রে মিশন কিনতে বলা হয়েছে। অর্ডার দেওয়া হয়েছে ৩০ লিটার তেলও। কাউন্সিলরদের প্রয়োজনীয় তেল দেবে পুরসভা।

মেদিনীপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “পুরসভার ৮টি মেশিন দিয়ে দিনে চারটি করে ওয়ার্ডে স্প্রে চলছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য সব কাউন্সিলরদের একটি করে স্প্রে মেশিন কিনতে বলা হয়েছে। পুরসভাই মেশিন কেনার টাকা দেবে।”

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথমদিকে মূলত গড়বেতা-৩ ব্লকে জ্বরের প্রকোপ ছড়ায়। যদিও প্রথমে আক্রান্তদের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি। ১৮ জন রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে কলকাতায় স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মেলে। তারপরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একে একে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ জন। এর মধ্যে গড়বেতা-৩ ব্লকে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেটে বেশি ২২ জন। মেদিনীপুরের পাশাপাশি খড়্গপুর শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তিন জন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “এখনও পর্যন্ত মেদিনীপুর পুর এলাকায় ৬ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। জেলায় যে ৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই সুস্থও হয়ে গিয়েছেন।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মেদিনীপুর শহরে আক্রান্ত আরও বাড়তে পারে। কয়েকজন মেদিনীপুর মেডিক্যালে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলেন, কেবল তাঁদের পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আছে। বেসরকারি হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে যারা রয়েছেন বা বাড়ি থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন সেই পরিসংখ্যান এখনও সংগ্রহ করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। সব পরিসংখ্যান পেলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

শহরে ডেঙ্গি ঠেকাতে ঠিক কতটা তৎপর পুরসভা? মেদিনীপুরে নিকাশি নালা বেহাল। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় অবরুদ্ধ নালা উপচে ভাসে রাস্তা। রাস্তাতেও জল জমে থাকে। আর রাস্তার ধারে আবর্জনা জমে থাকা নিত্যদিনের ছবি। পুরসভা সূত্রে খবর, পুরকর্মীদের দ্রুত শহরের সর্বত্র আগাছা পরিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জল জমে থাকা আটকাতেও নজরদারি চালানো হবে। কাউন্সিলরদেরও সর্বত্র ঘুরে দেখতে বলা হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, আগে মাসের শেষে সাফাই কর্মীরা কোন কোন এলাকা পরিষ্কার করেছে, সেই সংক্রান্ত কাগজে কাউন্সিলরদের দিয়ে সই করিয়ে নিতেন। কাজে ফাঁকি রুখতে এ বার থেকে প্রতিদিন কাউন্সিলরদের দিয়ে ওই কাগজে সই করাতে বলা হয়েছে। কাউন্সিলর ও সাফাই কর্মীর আঁতাতের অভিযোগও পুরসভার অজানা নয়। এলাকা যথাযথ ভাবে সাফাই হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নজর রাখতে প্রতি দিন পাঁচ জন এলাকাবাসীরও স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। উপ-পুরপ্রধানের কথায়, “পরিস্থিতি যাতে কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে জন্য গুরুত্ব দিয়েই ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ করা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement