মুক্তির-স্বাদ: বিদ্যাসাগর পার্কে চড়ুইভাতিতে হোমের কিশোরদের খেলাধুলো। নিজস্ব চিত্র
একঘেয়ে জীবনযাত্রা থেকে বেরিয়ে একটু অন্য রকম কিছু করার আনন্দই আলাদা। শুক্রবার সারাদিন সেই আনন্দেই মশগুল থাকল বিজয়, অভিজিৎ ও ইব্রাহিমরা। এরা সকলে ডেবরার একটি কিশোর হোমের আবাসিক।
হোমের ৬-১৮ বছর বয়সী ৯০জন আবাসিকককে নিয়ে শুক্রবার মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর পার্কে চড়ুইভাতির আয়োজন করেছিল হোম কর্তৃপক্ষ। এ দিন সকালে ডেবরা থেকে পুলিশ পাহারায় তাদের নিয়ে আসা হয়। সাজানো পার্কে নানা ধরনের খেলার সামগ্রী পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে কিশোর-তরুণরা।
নিরাপত্তার কড়াকড়িতেই দিন কাটাতে হয় হোমের আবাসিকদের। তাই একটা দিন অন্য রকম ভাবে কাটানোর ইচ্ছা থাকে। ছোটদের কথা ভেবেই এ বছর প্রথম আবাসিকদের বাইরে কোথাও নিয়ে গিয়ে চড়ুইভাতি করার পরিকল্পনা করেন ডেবরার এই হোমের কর্তৃপক্ষ। চাইল্ড ওয়েফেয়ার কমিটির কাছে আবেদন করলে ছাড়পত্রও মেলে। মেলে পুলিশি নিরাপত্তা।
চলছে খাওয়া-দাওয়া।
শুক্রবার সকালে বাসে পুলিশ পাহারা দিয়ে ডেবরা থেকে মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হয় বাচ্চাদের। পার্কে এসে কেক খেয়ে সবাই মেতে ওঠে খেলাধুলোয়। হোমের আবাসিক ১০ বছরের বিজয় রাণা বলে, ‘‘প্রথমবার এ ভাবে বাইরে এসে খেলার সুযোগ পেলাম। একসঙ্গে সবাই মিলে এতদূরে আসায় খুবই ভাল লাগছে।’’ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ১২ বছরের করণ কুমার এই হোমে তিন বছর ধরে রয়েছে। করনও বলছিল, ‘‘পার্কে এসে দোলনা চড়েছি, স্লিপে চড়েছি, দুপুরে সবাই মিলে মাংস-ভাত খেয়েছি। প্রতি বছর এ রকম হলে ভাল হয়।’’ ডেবরার এই হোমের সম্পাদক ত্রিদিব দাস বেরা বলেন, ‘‘শীতের মরসুমে সকলেই তো আনন্দ করে। এই ছোটছোট ছেলেগুলি পরিবার ছেড়ে বাইরে রয়েছে। ওদের একটু আনন্দ দিতেই এই আয়োজন করেছি।’’ চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের পক্ষ থেকে পার্কে চড়ুইভাতি ও পুলিশি পাহারার আয়োজন করে দেওয়ায় ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি। সিডব্লুসি-র চেয়ারম্যান মৌ রায় বলেন, ‘‘একটা দিন বাচ্চারা যাতে আনন্দ করতে পারে, সে জন্যই হোম কর্তৃপক্ষকে চড়ুইভাতির ছাড়পত্র দিয়েছি।’’
ডেবরার হোম থেকেই রান্না করার সরঞ্জাম পার্কে নিয়ে আসা হয়েছিল। পুরের মেনুতে ছিল— ফ্রায়েড রাইস, আনাজ দিয়ে ডাল, খাসির মাংস, চাটনি, মিষ্টি ও আইসক্রিম। খোলা আকাশের নিচে সকলে মিলে চেটেপুটে খেয়ে খুশি কচিকাঁচারা।