সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ

ঘুমন্ত স্বামীকে খুন, গ্রেফতার প্রেমিকও

ঘুমন্ত স্বামীর মাথায় হাতুড়ি মেরে খুনের অভিযোগে গৃহবধূকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন ওই মহিলার অভিযুক্ত প্রেমিক সূর্যকান্তি পাল। তবে শেষ রক্ষা হল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৫
Share:

সূর্যকান্তি পাল। নিজস্ব চিত্র।

ঘুমন্ত স্বামীর মাথায় হাতুড়ি মেরে খুনের অভিযোগে গৃহবধূকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন ওই মহিলার অভিযুক্ত প্রেমিক সূর্যকান্তি পাল। তবে শেষ রক্ষা হল না। শুক্রবার গভীর রাতে ঝাড়খন্ড সীমানাবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি থানার সোনামুখী গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে শনিবার ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক অনিরুদ্ধ সাহা সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

গত ২৫ অক্টোবর ঝাড়গ্রাম শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন এলআইসি মোড় এলাকার বাড়িতেই উদ্ধার হয় বছর পঞ্চাশের বিকাশ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলানো দেহ। ওই দিনই খুনের অভিযোগে বিকাশবাবুর স্ত্রী ঝর্না মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশি জেরায় ঝর্না স্বীকার করেন, প্রেমিক সূর্যকান্তির সাহায্যে মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে স্বামীকে খুন করেছেন তিনি। তবে তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রথম হাতুড়ির বাড়ি ঝর্না মারলেও এরপর হাতুড়ির বাড়ি মেরে সূর্যকান্তিই বিকাশবাবুকে খুন করেন। আর ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিলেন বছর বিয়াল্লিশের সূর্যকান্তি।

ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা সূর্যকান্তি লালগড়ের হরিণাগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পুলিশ সূর্যকান্তির ভাই তপন পাল-সহ কয়েকজনকে জেরা শুরু করে। সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু কিছুতে সূর্যকান্তির হদিশ মিলছিল না। এরপর তপনের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাতা শুরু হয়। কিন্তু সরাসরি ফোনে তপনের সঙ্গে সূর্যকান্তির কথা হচ্ছিল না। তপনের ফোনে সূর্যকান্তির এক দিদির কথোপকথনের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, সূর্যকান্তি ঝাড়খণ্ডের দক্ষিণশোলে এক বোনের বাড়িতে গা ঢাকা দেন। কয়েকদিন পলাশবনি গ্রামে আর এক বোনের বাড়িতেও আত্মগোপন করে ছিলেন। শুক্রবার পুলিশ খবর পায়, সোনামুখী গ্রামে এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে সূর্যকান্তি আত্মগোপন করে রয়েছেন। এরপরই গভীর রাতে এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) বিবেক বর্মার নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী সোনামুখী গ্রামের ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। বাড়ির গোয়াল ঘরে টিশার্ট ও বারমুডা পরে লুকিয়ে ছিলেন সূর্যকান্তি।

Advertisement

পুলিশের দাবি, জেরায় সূর্যকান্তি খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘুমন্ত বিকাশবাবুর মাথায় প্রথম হাতুড়ির বাড়ি মারেন ঝর্না। এরপর অন্ধকার ঘরে ঝর্না টর্চ জ্বালিয়ে থাকেন আর ক্রমাগত হাতুড়ির বাড়ি মেরে বিকাশবাবুকে খুন করেন সূর্যকান্তি। পুলিশের দাবি ছিল, ছেলেদের প্রাক্তন গৃহশিক্ষক সূর্যকান্তির সঙ্গে স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি বিকাশবাবু। এরপরই বিকাশবাবুকে খুনের পরিকল্পনা করেন ঝর্না ও সূর্যকান্তি। এমনকী সূর্যকান্তিকে ফোন করে বাড়িতে ডেকেছিলেন ঝর্নাই। সূর্যকান্তির আইনজীবী সুজিতকুমার ঘোষের অবশ্য দাবি, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে।

ঝর্নাকে গ্রেফতারের দিনেই বাড়ির দেওয়াল আলমারি থেকে খুনে ব্যবহৃত হাতুড়িটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। টর্চটি এবং সূর্যকান্তির রক্তমাখা পোষাক এখনও উদ্ধার হয়নি। সূর্যকান্তিকে জেরা করে মামলার প্রমাণ হিসেবে সেগুলির হদিশ পেতে চায় পুলিশ। এ দিকে, ঘটনার শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে বিকাশবাবুর ছোটছেলে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া অভিজিৎ। সে এখন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement