ভাদুতলায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

২ পড়ুয়ার মৃত্যু, মার আইসিকে

জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় দুই স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুতে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল শালবনির ভাদুতলা। বৃহস্পতিবার সকালে ওই দুর্ঘটনার পরে এলাকায় গিয়েছিলেন শালবনি থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২৮
Share:

মরণ-বাঁচন: চিকিৎসা চলছে জখম পড়ুয়াদের। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় দুই স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুতে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল শালবনির ভাদুতলা। বৃহস্পতিবার সকালে ওই দুর্ঘটনার পরে এলাকায় গিয়েছিলেন শালবনি থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহা। তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে ক্ষুব্ধ জনতা। ইটের ঘায়ে মাথায় চোট পান বিশ্বজিৎবাবু। তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিন জনরোষের মুখে পড়েন শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহও। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

Advertisement

রোজকার মতোই এ দিন অটোতে স্কুলে যাচ্ছিল ভাদুতলা হাইস্কুলের পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির জনা বারো পড়ুয়া। স্কুলে পরীক্ষাও ছিল। তবে শেষমেশ আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। সকাল সওয়া দশটা নাগাদ ভাদুতলায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দশ চাকার লরির ধাক্কায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অটোটি। ছাত্রছাত্রী, অটো চালক এবং লরির চালক সকলেই জখম হন। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে মারা যায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সন্দীপ অধিকারী (১০) এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সনিয়া সরেন (১১)। দু’জনেরই বাড়ি মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাড়ুয়ায়। জখমদের মধ্যে চার পডুয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। লরি ও অটোর চালক-সহ বাকিরা মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘লরির টায়ার ফেটেই দুর্ঘটনা। ওই এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ লরিটিকে আটক করা হয়েছে। চালক সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শালবনি থেকে মেদিনীপুরগামী তুষের বস্তা বোঝাই দশ চাকার লরিটি এ দিন প্রথমে গোদাপিয়াশালে একটি বাসে ধাক্কা মারে। বাসেরও কয়েকজন যাত্রী সামান্য জখম হন। এরপর বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ভাদুতলা চেক পোস্টের কাছে। সেখানে জাতীয় সড়কের দু’দিকে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। কর্তব্যরত পুলিশকর্মী লরিটিকে থামাতে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্যারিকেডে ধাক্কা মারে। ব্যারিকেড ভেঙে লোহার পাত ঢুকে লরির সামনের ডান দিকের চাকা ফেটে যায়। পাল্টি খেয়ে লরিটি মেদিনীপুরের দিক থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে আসা অটোতে ধাক্কা মারে। অটোও উল্টে যায়। এরপর জাতীয় সড়কের ওই অংশে যান নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলেন এলাকাবাসী। পুলিশ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এলে শুরু হয় মারধর।

Advertisement

মেদিনীপুর মেডিক্যালে ছেলের দেহের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন সন্দীপের বাবা প্রতাপ অধিকারী। বলছিলেন, “সব শেষ হয়ে গেল।” জখম পড়ুয়াদের দেখতে মেডিক্যালে এসেছিলেন ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী। চোখে জল তাঁরও। আর জখম অটো চালক শেখ আসলাম বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ঘটনা এড়াতে পারলাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন