নির্দেশ উড়িয়ে বেআইনি বাজি ঘাটালে

শব্দবাজি তৈরি ও বিক্রি বন্ধে সারা জেলা জুড়েই শুরু হয়েছে পুলিশি ধরপাকড়। বস্তা বস্তা শব্দবাজি আটকও হচ্ছে। কিন্তু আদৌ লাগাম দেওযা যাচ্ছে কি বেআইনি শব্দবাজি বিক্রিতে?

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

খ়ড়ারে প্রকাশ্যে বিকোচ্ছে শব্দবাজি। নিজস্ব চিত্র

শব্দবাজি তৈরি ও বিক্রি বন্ধে সারা জেলা জুড়েই শুরু হয়েছে পুলিশি ধরপাকড়। বস্তা বস্তা শব্দবাজি আটকও হচ্ছে। কিন্তু আদৌ লাগাম দেওযা যাচ্ছে কি বেআইনি শব্দবাজি বিক্রিতে?

Advertisement

শব্দবাজি ও তার মশলা বিক্রির অভিযোগে রবিবার রাতে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ। রবিবার রাত দশটা নাগাদ ভবানীপুর থানার গেঁওডাব থেকে ইন্দ্রজিৎ হাজরা নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েক কিলোগ্রাম শব্দবাজির মশলা এবং চকোলেট বোম বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। সোমবার ধৃতকে হলদিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারপতি ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। রবিবার রাতেই গোয়ালতোড় থানার হুমগড় বাজারে একটি দোকানে তল্লাশি চালিয়ে এক বস্তা শব্দবাজি উদ্ধার করল পুলিশ। বেআইনি ভাবে শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগে দোকান মালিক সুনীল কুমার নন্দীর নামে মামলাও শুরু হয়েছে। শনিবার ও রবিবার দু’দিন ধরে কাঁথি, রামনগর, খেজুরি ও মারিশদা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবারও চন্দ্রকোনার রামজীবনপুর থেকে পরপর আটটি দোকানে তল্লাশি চালিয়ে চার কুইন্ট্যালের বেশি নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটক করেছে পুলিশ। সঙ্গে বেআইনি ভাবে বাজি বিক্রির অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতারও কার হয়েছে। ধৃতদের মঙ্গলবার ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের জামিন নামাঞ্জুর করেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলেন, “জেলা জুড়ে অভিযান চলছে। লাইসেন্স থাকলেও সংশ্লিষ্ট দোকানে নিষিদ্ধ কোনও বাজি বিক্রি করা যাবে না।”

জানা গিয়েছে, ঘাটালের আলুই, মনোহরপুর, কুঠিঘাট, রামজীবনপুর, ইড়পালা, জাড়া-সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২০-২২টি বড় কারখানাতে বাজি তৈরি হয়। এছাড়াও ছোট-ছোট অনেক কারখানা তো রয়েইছে। অভিযোগ, ফি বছর ওই কারখানাগুলিতে নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি হয়। দুর্গাপুজোর এক মাস আগে থেকে বাজি তৈরির পরিমাণ বাড়ে। লক্ষীপুজোর পর থেকেই বস্তা বস্তা বাজি পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান প্রত্যন্ত গঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

বাজি বিক্রির জন্য লাইসেন্স জরুরি। প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দেওয়ার পর পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে জেলাশাসক এই লাইসেন্স দেন। তবে লাইসেন্স থাকলেও সেখানে আতসবাজি জাতীয় বাজিই বিক্রি করার কথা। কিন্তু পুলিশেরই একটি তথ্য বলেছে, জেলার সত্তর ভাগ লাইসেন্সবিহীন দোকানেই বিকোচ্ছে শব্দবাজি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটালের এক বাজি কারখানার মালিকের কথায়, ‘‘পুলিশের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া রয়েছে। কিন্তু পুলিশের উপর থেকে বা সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি শুরু হলে আমরাই কিছু কারখানার সন্ধান দিই। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বাজি তৈরির মশলা ও কিছু বাজিও আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। দু’চারজনকে আটকও করে। পরে সব ঠিক হয়ে যায়।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একাধিক পুলিশ কর্মীর কথায়, “অভিযান চালিয়ে বাজি-সহ বিক্রেতাদের আটক করা হয়। পরে মোটা টাকার বিনিময়ে ছাড়ও মেলে। এটাই দস্তুর। তাই যতই বাজি বিক্রি ও তৈরি নিষিদ্ধ হোক, রাশ টানবে কে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন