সাদামাঠা মঞ্চে জমি পুনরুদ্ধারের শপথ

জন-গণ-মন জয়ে

গত কয়েক বছরে যেখানে তৃণমূলের সভামঞ্চে কুলার থাকাটা রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল, সেখানে এ দিন ছিল দু’টি মাত্র স্ট্যান্ড ফ্যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫০
Share:

নতশির: সভায় মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

লোকসভা ভোটের পরে জেলায় শাসক দলের প্রথম বড় জনসভা। প্রধান বক্তা শুভেন্দু অধিকারী। অন্য মন্ত্রী, বিধায়ক, নেতারাও হাজির।

Advertisement

মঞ্চে অবশ্য ঝকমকে ব্যাপারটাই নেই। গত কয়েক বছরে যেখানে তৃণমূলের সভামঞ্চে কুলার থাকাটা রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল, সেখানে এ দিন ছিল দু’টি মাত্র স্ট্যান্ড ফ্যান। মঞ্চের সাজও সাদামাঠা। সামনে এক দিকে মহাত্মা গাঁধী, নেতাজি, মাতঙ্গিনী হাজরার ছবি। অন্য দিকে বিদ্যাসাগরের ছবি। পিছনে বিবেকানন্দ, ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিংহের ছবি।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে সামনে রেখেই শুক্রবার মেদিনীপুরে তৃণমূলের সভা হয়। তবে সেখানে জাঁক ছিল না। শুভেন্দু মঞ্চে ওঠার পরে তাঁর নামে স্লোগান শুরু হলে কর্মীদের থামিয়ে দেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘স্লোগান দিতে হবে না।’’ এমনকি মঞ্চে শুভেন্দুর জন্য নির্দিষ্ট চেয়ার উত্তরা সিংহ সামনে টেনে আনলে শুভেন্দু চেয়ার পিছিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘এক সাথেই বসব।’’

Advertisement

কুলার উধাও। মঞ্চে ফিরল স্ট্যান্ড ফ্যান। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে দলকে পুরনো দিনে ফেরার বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতা-কর্মীদের গ্রামে গিয়ে খাটিয়ায় বসে জনসংযোগ করতে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এ দিনের সভাতেও ‘জাঁকজমক’ ঝেড়ে ফেলে ‘সাধারণ’ হওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল। মঞ্চে তো কোনও জৌলুস ছিল না? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি মানছেন, ‘‘আমরাই জৌলুস রাখতে চাইনি। আমাদের অত টাকা কোথায়? সাদামাঠা মঞ্চই ভাল।’’ অর্থাভাবেই সভায় আসার গাড়ি ভাড়া করা যাচ্ছে না বলে আগেই জানিয়েছিল গোয়ালতোড় ব্লক তৃণমূল। এ দিন বাইকে চড়েই ব্লকের যুব কর্মীরা শুভেন্দুর সভায় পৌঁছন। যুব তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি গণেশ দত্ত বলেন, ‘‘কয়েকশো বাইকে যুবকর্মীরা পিড়াকাটা, শালবনি, ভাদুতলা হয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে মেদিনীপুরের সমাবেশে যোগ দেন।’’

সভায় শুভেন্দু মেনে নেন, লোকসভায় দল জমি হারিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বার্তা, ‘‘আমরা মানুষকে নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের হারানো জমি, মাটি উদ্ধার করব, করবই। এটাই আমাদের শপথ।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পরে আমি জেলার প্রান্তে প্রান্তে ঘুরেছি। সকলকে বলেছি, ঘরছাড়া কখনও বিধায়কেরা হয় না, নেতারা হয় না, সাধারণ মানুষ হয়। আমরা আহত, বিকলাঙ্গ লোকেদের দেখেছি। মানুষের কষ্ট বুঝেছি। তাই তো আমরা বলেছি, কেউ ঘরছাড়া হোক, কারও পার্টি অফিসে তালা পড়ুক, আমরা আর চাই না। আবার শহিদবেদি, আবার মরদেহে পুষ্পমাল্য, এ জিনিস মেদিনীপুরের মানুষ আর চায় না।’’

এ দিন গোড়াতেই শুভেন্দু মনে করিয়ে দেন, প্রতি বছর নিষ্ঠার সঙ্গে ৯ অগস্টের কর্মসূচি পালন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পালন করে তৃণমূল। তিনি বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের মধ্যে যে জেলা ব্রিটিশ রাজশক্তিকে নড়িয়ে দিয়েছিল গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সেটা মেদিনীপুর জেলা।’’ সভায় শুভেন্দুর ঘোষণা, ‘‘আমি তৃণমূলস্তর থেকে লড়াই-সংগ্রামে রয়েছি। ভবিষ্যতেও থাকব।’’ বক্তব্যে সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপিকেও নিশানা করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের লোকেরা আজকে লাল জামা খুলে গেরুয়া জামা পরেছে। সিপিএমের কায়দায় দখলের রাজনীতি করছে। অধিকারের লড়াইয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’’

সভাস্থলে কাপড়ের ছাউনি দেওয়া অংশ ভিড়ে ঠাসা ছিল। তবে পুরো মাঠ ভরেনি। শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘একদিন আগেও বর্ষণমুখর দিন ছিল। আমরা সব জায়গায় প্রচার করতে পারিনি। এই মাঠে সভা করতে গেলে পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া-সহ অনেক জায়গা থেকে লোক আনতে হয়। আমি ধন্যবাদ জানাব অজিত মাইতিদের। পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটা ব্লকের মানুষকে এই সভায় এনে ওঁরা ভরিয়ে দিয়েছেন।’’

শুভেন্দুর প্রত্যয়, ‘‘আমরা আবার জিতব। ২০১১ সালের মতো ২০২১ সালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় জন-গণ-মন সরকার তৈরি হবে।’’ সভায় বক্তৃতা করেন মানস ভুঁইয়া, দীনেন রায়, শিউলি সাহা, অজিত মাইতিরা। সভা শেষে মঞ্চে বসে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুর শহরটা খুব সঙ্কীর্ণ। গাড়িগুলি ঢুকতে পারল না বলে অনেক মানুষ সভায় আসতেই পারলেন না।’’

রোদ সরে আকাশে তখন বর্ষার মেঘ জমছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন