Chaton Hill

আগ্রহ বাড়াচ্ছে চাতন পাহাড়ের তিন আদিম গুহা

বেলপাহাড়ি ট্যুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ এক দশক ধরে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেত্রসমীক্ষা করছেন। বিধান জানাচ্ছেন, ছ’য়ের দশকে প্রত্নগবেষক অশোক ঘোষের নেতৃত্বে এক গবেষক দল বেলপাহাড়িতে তাম্র-প্রস্তর যুগের বহু নিদর্শন খুঁজে পেয়েছিল।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৯
Share:

চাতন পাহাড়ের গুহা। —নিজস্ব চিত্র।

লালজল পাহাড় পর্যটকের সঙ্গে গবেষকদেরও আগ্রহের বিষয়। বেলপাহাড়ির এই এলাকায় সৌন্দর্য আর আদিম মানবের গুহার একসঙ্গে অবস্থান। এই বেলপাহাড়িতেই রয়েছে চাতন পাহাড়। পাহাড়ে রয়েছে তিনটি আদিম মানবের গুহা। এখানেও প্রকৃতি ও আদিম ইতিহাসের সহাবস্থান। সেই সঙ্গে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। এই তিনের মিশেলে চাতন পাহাড়ের তিনটি গুহা পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

Advertisement

বেলপাহাড়ি ট্যুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ এক দশক ধরে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেত্রসমীক্ষা করছেন। বিধান জানাচ্ছেন, ছ’য়ের দশকে প্রত্নগবেষক অশোক ঘোষের নেতৃত্বে এক গবেষক দল বেলপাহাড়িতে তাম্র-প্রস্তর যুগের বহু নিদর্শন খুঁজে পেয়েছিল। এগুলোর অন্যতম ছিল চাতন পাহাড়। স্থানীয় ভাষায় চাতন ডুংরি। বেলপাহাড়ি থেকে কাঁকড়াঝোরের পথে পড়ে বদাডি মোড়। এই মোড়ে রয়েছে চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা দুর্জন সিংয়ের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। সেখানে গাড়ি রেখে ডানদিকে শালবনে ঘেরা পাহাড়ি পথ বেয়ে দু’শো মিটার উপরে উঠলে দেখা যাবে মাকড়া পাথরের প্রাকৃতিক তিনটি গুহা। জনশ্রুতি, সেগুলোই আদিম মানবের গুহা। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা দুর্জন সিং ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ে আহত হয়ে আত্মগোপন করেছিলেন ওই গুহাতেই। শোনা যায় এমন কথাও।

চাতন পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিম ঢালে ডোমগড় গ্রামে আরেকটি গুহা ও গড়ের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, পাঁচশো বছর আগে এটি ঝাঁটিবনি (শিলদা) পরগনার রাজা বিজয় সিংহের রাজধানী ছিল। এই বিজয় সিংহকে পরাজিত করেছিলেন উৎকলের সামন্ত রাজা মেদিনী মল্ল রায়। চাতন ডুংরির পশ্চিম ঢালে রয়েছে পলাশবন। বসন্তে তার অপরূপ শোভা! তবে এতদিন প্রচারের আড়ালেই ছিল শিমুলপাল অঞ্চলের চাতন ডুংরি। ভুলাভেদা অঞ্চলের লালজলের দেবী পাহাড়ে আদিম মানবের গুহা দেখাতে ভিড় করেন পর্যটকেরা।

Advertisement

সাত ও আটের দশকে রাজ্যের প্রত্নবস্তু সহায়ক বিশ্বনাথ সামন্ত টানা ১২ বছর লালজলে ক্ষেত্রসমীক্ষা করেছিলেন। সেই ঘটনার অভিজ্ঞতা লিখেছিলেন প্রয়াত লোকসংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর লেখা থেকে জানা যায়, লালজলের গুহার বিভিন্ন স্তরে আদি, মধ্য ও নব্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শন পেয়েছিলেন বিশ্বনাথ সামন্ত। মিলেছিল পাথরের লাঙল, নীল গাইয়ের হাড়ের ফসিল, পাথরের তিরের ফলা, ত্রিভুজাকৃতি পাথরের চপার। লালজল, তামাজুড়ি ও তামলিমাঞ থেকেও তাম্র-প্রস্তর যুগের নির্দশন মিলেছিল। নীলকরদের আমলে একটি নীলকুঠি লাগোয়া জলাশয় খননের সময় তামাজুড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছিল দু’টি তামার কুঠার। পরে সেগুলোর ঠাঁই হয় জাদুঘরে। তবে কালের বিবর্তনে লালজলের গুহাটি বসে যাওয়ায় সেখানে ঢোকার মতো পরিস্থিতি নেই। সাপখোপের ভয়ে গুহায় কেউ ঢোকার চেষ্টা করেন না। তুলনামূলক ভাবে চাতন পাহাড়ের গুহাগুলোয় সহজেই ঢোকা যায়। বিধান দেবনাথ বলছেন, ‘‘চাতন পাহাড়ের গুহার দেওয়ালগুলো ক্ষয়ে গিয়েছে। এলাকাটি ওড়িশার খণ্ডগিরির মতোই। চাতন পাহাড়ে গিয়ে রোমাঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকেরা।’’

কলকাতাবাসী পর্যটক প্রশান্ত সরকার, নদিয়ার দত্তফুলিয়ার মেহেদি হাসান, সঞ্জয় কর্মকার বলছেন, ‘‘পাহাড়ের উপরে উঠতে একটু কষ্ট হয়েছিল। তবে চড়ার পর গুহার মাথায় বসে চারপাশের নিসর্গ দেখে এক অতুলনীয় অভিজ্ঞতা হয়েছে।’’ রানাঘাটের কৃশানু রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘বেলপাহাড়িতে এত সুন্দর জায়গা রয়েছে, সেটা জানা ছিল না। গুহায় মাথায় উঠে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড় আর ঘন সবুজ প্রকৃতি দেখে দার্জিলিংয়ের সিটংয়ে কথা মনে পড়ে যায়।’’

পর্যটকদের বক্তব্য, পাথর দিয়ে পাহাড়ে ওঠার প্রাকৃতিক সিঁড়ির ব্যবস্থা হলে গুহাদর্শন আরও সহজ হবে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন