শিশু মৃত্যুতে ত্রুটির নালিশ

দশ মাসে মৃত ৮৯৪!

শিশুমৃত্যুতে রাশ টানা যাচ্ছে না। গত দশ মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৯০০ শিশুর মৃত্যুর পরিসংখ্যান তারই নজির!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতিতে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে জেলায় জেলায়। অনেক হাসপাতালে রয়েছে এসএনসিইউ, এসএনএসইউ-ও। একইসঙ্গে প্রসূতির পুষ্টির জন্য অঙ্গনওয়া়ড়ি কেন্দ্র থেকে নানা পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তারপরেও অবশ্য শিশুমৃত্যুতে রাশ টানা যাচ্ছে না। গত দশ মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৯০০ শিশুর মৃত্যুর পরিসংখ্যান তারই নজির!

Advertisement

মাস কয়েক আগের ঘটনা। শিশুমৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার বেধেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ সরব হয়েছিলেন মৃতের পরিজনেরা। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন মেদিনীপুর গ্রামীণের এক প্রসূতি। পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। একদিন পরই শিশুটির মৃত্যু হয়। শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় শিশুটিকে এসএনসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

মৃতের পরিজনেদের দাবি ছিল, সঠিক ভাবে চিকিত্সা হলে মৃত্যু হত না। মেডিক্যালের অবশ্য বক্তব্য ছিল, শিশুটির শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। তাই এসএনসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা হয়েছিল। তবে সম্ভব হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২টি এসএনসিইউ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল এবং ঘাটাল হাসপাতালে। ১৪টি এসএনএসইউ (সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজেশন ইউনিট) রয়েছে। এসএনএসইউ রয়েছে গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।

Advertisement

সদ্যোজাতদের মৃত্যুর হার কমাতে প্রচুর টাকা খরচ করে একের পর এক এসএনসিইউ-এসএনএসইউ গড়ে তোলা হয়েছে। তবুও কেন মৃত্যুর হারের বিশেষ হেরফের হচ্ছে না? জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলছেন, “জেলায় শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। অনেক সময় চেষ্টা করেও কম ওজনের শিশুকে বাঁচানো যায় না। তবে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ এলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।”

প্রয়োজনীয় চিকিত্সক, নার্স, কর্মী ও অন্য পরিকাঠামোর অভাবে শিশু ইউনিটগুলো ধুঁকছে বলেও অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই দশ মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮৯৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ৩৯ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, আগের থেকে শিশুমৃত্যু অনেক কমেছে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে ‘চাইল্ড ডেথ রিভিউ’ কমিটি গড়া হয়েছে। শিশুমৃত্যুর পর্যালোচনার জন্যই এই কমিটি। কীভাবে কাজ করে কমিটির? শুরুতে মৃত শিশুর প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কথা। তথ্য সংগ্রহ করবেন এএনএম কিংবা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা। মৃত্যুর দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করার কথা। প্রাথমিক ভাবে পর্যালোচনাও করার কথা। এক মাসের মধ্যে ব্লকে রিপোর্ট জমা পড়বে। এক সূত্রে খবর, ওই দশ মাসে যে ৮৯৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তার মধ্যে ৩০১ জন শিশুমৃত্যুর সমস্ত পর্যালোচনা হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার অবশ্য দাবি, “এর ফলে কোথাও সামান্য ভুল হয়ে থাকলেও তা ধরা পড়ে। ফলে, পরবর্তী সময় একই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি কমে যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন