হাতি তাড়াতে হুলা জ্বালানো চলছে খয়েরুল্লা চক লাগোয়া নন্দগাড়ি গ্রামে। রবিবার সন্ধ্যার মুখে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
শহরের একেবারে কাছাকাছি এসে পড়েছে হাতির দল। মেদিনীপুর শহরের অদূরে গ্রামীণ থানা এলাকার খয়েরুল্লাচকে এই মুহূর্তে এখন রয়েছে গোটা ষাটেক হাতির বেশ বড় ওই দলটি। ফলে, উদ্বেগে রয়েছেন এলাকাবাসী। তাল কাটছে উৎসবের।
খয়েরুল্লা চকে দুর্গাপুজোর পরে ঘটা করে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা হাতির হানায় পুজোর আনন্দ মাটি হবে না তো! চিন্তায় ঘুম উড়েছে পুজো উদ্যোক্তাদেরও। খয়েরুল্লাচকে একাধিক বড় বাজেটের জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। পুজো ঘিরে মেলা বসে। নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর এ বার ১৮ তম বর্ষ। এই পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ কর্মকার মানছেন, ‘‘এ বার হাতি নিয়ে আমরা বেশ চিন্তায় আছি। এখন তো আমাদের গ্রামের জঙ্গলেই হাতির দল ঘোরাঘুরি করছে। যখন তখন জঙ্গল থেকে বেরিয়েও পড়ছে। পুজোর দিনগুলোয় যে কি হবে!" নবোদয় দীপ্তি সঙ্ঘের পুজোর এ বার ১৬ তম বর্ষ। এই পুজোর সভাপতি সুকুমার সাহারও বক্তব্য, ‘‘সত্যি হাতি এ বার বেশ ভাবাচ্ছে। পুজোর দিনে একটা- দু’টো হাতি গ্রামে ঢুকে পড়লেও বিপত্তির শেষ থাকবে না। হাতি খেদানো তো খুব সহজ নয়।’’
স্থানীয়দের ক্ষোভ, বন দফতর হাতির দলকে ঠেকাতে পারছে না। গ্রামের মানুষই পটকা ফাটিয়ে, হুলা জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ফসল বাঁচাতে খেত পাহারা দিচ্ছেন। বিশ্বজিৎ বলছিলেন, ‘‘হাতি তাড়াতে আরও তৎপর হওয়া উচিত বন দফতরের। বিশেষ করে সামনে যখন পুজো।’’ সুকুমারের কথায়, ‘‘খবর দেওয়ার অনেক পরে হুলাপার্টি আসছে। গ্রামের অনেকেই বিরক্ত।’’ মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘ওই এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। হাতির দলের গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়েছে। উদ্বেগের কিছু নেই।’’
গ্রামবাসীদের অনেকে অবশ্য বেশ উদ্বিগ্নই। বিশেষ করে পুজো উদ্যোক্তারা। জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে খয়েরুল্লা চকে এখন সাজ সাজ রব। মণ্ডপ তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়েছে। পুজোর কোন দিনে কী অনুষ্ঠান হবে, তাও প্রায় চূড়ান্ত। উদ্বোধনেরও আর বেশি দেরি নেই। একেবারে কাছে। নবোদয় দীপ্তি সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধন পরশু, বুধবার। নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন তার পরের দিন, অর্থাৎ আগামী বৃহস্পতিবার।
দলমার দামালদের এই দলকে ফের দলমায় ফেরানোর চেষ্টা করছে বন দফতর। কিন্তু ফিরলে তো! তাই ভয় বাড়ছে। হাতির দল যে এখনও মেদিনীপুর শহরতলির আশপাশেই চরকিপাক খাচ্ছে!