রক্তের সঙ্কটে ভুগছে ঝাড়গ্রাম জেলার একমাত্র ব্লাড ব্যাঙ্ক!
এক সময় ব্লাড ব্যাঙ্কের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে মাঝপথে থমকে সেই কাজ। ব্লাডব্যাঙ্কের নিজস্ব গাড়ি থাকলেও বেশিরভাগ সময়েই তা খারাপ থাকে। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পুরনো ভবনে রয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্ক। একই চত্বরে ঝাঁ-চকচকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া হলেও ব্লাড ব্যাঙ্কের চেহারা এখনও সেই মান্ধাতা আমলের।
সুনসান ব্লাড ব্যাঙ্কে বসেছিলেন ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক স্মৃতি ওঁরাও। সব মিলিয়ে কর্মীর সংখ্যা জনা পাঁচেক। কেবল নেই প্রয়োজনীয় রক্তের জোগান। ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় যা রক্তদান শিবির হয় তা হাতে গোনা। তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। এ জন্য খড়্গপুর, ঘাটাল কিংবা বাঁকুড়ায় রক্তদান শিবিরে গিয়ে ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে রক্ত সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু গরমে সেটাও হচ্ছে না। তা ছাড়া দূরে রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপত্তিও ঘটে। কারণ, ব্লাড ব্যাঙ্কের মান্ধাতা আমলের গাড়ি প্রায়ই খারাপ হয়ে পড়ে থাকে। শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করে আনার সময় মাঝরাস্তায় গাড়ি বিগড়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের নাজেহাল হওয়ার উদাহরণও কম নয়।
ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোর উন্নয়নে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ৩২ লক্ষ টাকার প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।”
গরমে রক্তদান শিবির আয়োজনে এমনিতেই ভাটা থাকে। তার উপর এখনই যে গরম পড়েছে তাতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন কার্যত বন্ধ। গত মার্চে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ১২টি রক্তদান শিবির হয়েছিল। চলতি এপ্রিলে এখনও পর্যন্ত ৭টি শিবির হয়েছে। ফলে ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে রক্তের হাহাকার অবস্থা। প্রতি মাসে ২৪৬ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে একাধিক বার রক্তের জোগান দিতে গিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের হিমসিম অবস্থা হয়। ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির দৈনিক রক্তের চাহিদা প্রায় ২০ ইউনিট। সব মিলিয়ে মাসে গড় চাহিদা পাঁচশো ইউনিট। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে রক্তের ভাঁড়ার বাড়ন্ত।
চিকিৎসকেরা জানান, সামগ্রিক রক্তের পরিবর্তে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি), অগ্নিদগ্ধ রোগীদের রক্তরস (প্লাজমা), ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনুচক্রিকা (প্লেটলেট)-র মতো রক্তের বিভাজিত অংশ দেওয়া প্রয়োজন। ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের পৃথকীকরণ ইউনিট ( সেপারেশন ইউনিট) নেই। ফলে, রোগীদের ‘হোল ব্লাড’ দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, পৃথকীকরণ ইউনিট থাকলে সংগৃহীত রক্তের উপাদান বিভাজিত করে সঙ্কট অনেকটাই কাটানো যেত।
গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এখনও ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু করা যায়নি। বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে প্রস্তাবিত ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটও চালু হয়নি। ঝাড়গ্রাম জেলায় রক্তের জোগান দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন একমাত্র ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। জেলার সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “এ বার প্রবল গরমের জন্য শিবির কিছুটা কম হচ্ছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে প্রতিটি ব্লকের বিএমওইচ-দের পর্যায়ক্রমে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে বলা হয়েছে।” তিনি জানান, মে মাসের মধ্যে নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুরে ব্লাড ব্যাঙ্ক যাতে চালু করা যায় তার ব্যবস্থা হচ্ছে।