বেহাল নিকাশিতে হতশ্রী রেলশহর

শহরের মাঝামাঝি রেল এলাকা। আর তাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রয়েছে পুর এলাকা। খড়্গপুর পুরসভার অধীন এই পুরো এলাকাটাই নিকাশি সমস্যায় জর্জর। প্রতিবারই পুরভোট আসে আর নিকাশিকে ঘিরে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। অথচ, সারাবছর সুষ্ঠু নিকাশির অভাবে নাভিশ্বাস ওঠে শহরবাসীর। এ হার তাই পুরভোট আসতেই পাড়ায়-পাড়ায় নিকাশি নিয়ে সরব হয়েছেন ভোটাররা।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচি

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৪
Share:

এক পশলা বৃষ্টিতেই নালা উপচে জল জমে যায় ইন্দার রাস্তায়। ছবি: কিংশুক আইচ।

শহরের মাঝামাঝি রেল এলাকা। আর তাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রয়েছে পুর এলাকা। খড়্গপুর পুরসভার অধীন এই পুরো এলাকাটাই নিকাশি সমস্যায় জর্জর। প্রতিবারই পুরভোট আসে আর নিকাশিকে ঘিরে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। অথচ, সারাবছর সুষ্ঠু নিকাশির অভাবে নাভিশ্বাস ওঠে শহরবাসীর। এ হার তাই পুরভোট আসতেই পাড়ায়-পাড়ায় নিকাশি নিয়ে সরব হয়েছেন ভোটাররা। পথঘাট মেরামত, বিনোদন ক্ষেত্র গড়ে তোলা-সহ শহরের সৌন্দর্যায়নের দাবিও উঠছে। তবে সে সব ছেড়ে নিকাশির সুবন্দোবস্ত করার প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছেন বিদায়ী কংগ্রেস পুরপ্রধান। আর বিরোধীরা নিকাশি-সহ গোটা শহরের সৌন্দর্যায়নে জোর দেওয়ার কথা বলছে।

Advertisement

খড়্গপুর নদী থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় বন্যার প্রবণতা কম। শহরের মধ্যভাগ তুলনায় আরও উঁচু। তাই রেল এলাকার নিকাশির জলে ফি-বছর বর্ষায় পুর-এলাকার বেশ কিছু অংশ ডুবে যায়। পুর-এলাকার উপর দিয়ে রেলের প্রায় ১৬টি নর্দমা রয়েছে। সেগুলি সাফাইয়ের দায়িত্ব রেলের হলেও নিয়মিত তা হয় না। ফলে দুর্ভোগ বাড়ে। কিছু অংশে নর্দমা সংস্কারের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে যায় আশপাশের এলাকা। শহরের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এই সমস্যা সব থেকে বেশি। ওই এলাকার ইমলিতলা, মেহবুবনগর, কাজিমহল্লা, আলিনগর, কালকাটিতে সামান্য বর্ষায় উপচে ওঠে নর্দমা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তারা বিবি, আকসার আলি খানরা বলেন, ‘‘রেলের বড় নর্দমা নিয়েই আমাদের যত সমস্যা। রেল বা পুরসভা কেউ ওই নর্দমা দীর্ঘদিন সংস্কার করেনি। কাউন্সিলর নিজেও উদাসীন। অধিকাংশ এলাকায় তো নর্দমা নেই। সামান্য বৃষ্টিতে বাড়িতে জল ওঠে। সাফাই কর্মীদেরও দেখা যায় না। জানি না যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব কি না।’’

তালঝুলিতে পরিষ্কার হয় না জমে থাকা আবর্জনা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

Advertisement

খড়্গপুর শহরের ১, ৩, ৪, ৫, ১৪, ২৪, ২৮, ২৯, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় নর্দমার অভাব। কোথাও বাড়ির জল বাড়িতেই জমছে, কোথাও রাস্তা ডুবছে দূষিত জলে। নিকাশির অভাবে জেরবার নতুন বসতি এলাকার বাসিন্দারাও। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাপি সেনাপতি, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তি দাসের কথায়, ‘‘আমাদের এলাকায় বিগত পাঁচ বছরেও নিকাশির উন্নতি দেখিনি। এখনও ওয়ার্ডের সর্বত্র নর্দমাই নেই। ভোটের আগে কিছু কাজ হয়। কিন্তু তাতে কি আর দুর্দশা ঘোচে?’’ রেলের ৮টি ওয়ার্ড বাদে পুর-এলাকার বাকি অংশে কোথাও বড় নর্দমা নেই। সেই সঙ্গে শহর জুড়ে ভ্যাটের অভাব থাকায় আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে রাস্তাতেই। ইন্দার বাসিন্দা সন্দীপ রায়ের কথায়, ‘‘আইআইটি ও রেলের এই গুরুত্বপূর্ণ শহরে বাইরের লোকেদের আসা-যাওয়া লেগেই রয়েছে। কিন্তু শহরের প্রবেশপথ ওটি রোডের ধারেই নিত্যদিন জমে থাকা জঞ্জাল সাফাইয়ের ব্যবস্থাপনায় গোলমালে দূষণ ছড়ায়।’’

সৌন্দর্যায়নের দাবিও তুলছেন শহরবাসী। শহরের কিছু রাস্তার মোড়ে হাই-মাস্ট লাইট ও কিছু মনীষীদের মূর্তি বসেছে। শেষ কয়েক মাসে মালঞ্চ ও ঝাপেটাপুরের রাস্তায় বসেছে এলইডি পথবাতি। তবে অধিকাংশ পথেই আজও ভরসা টিমটিম করা বাল্ব। পথঘাটের শ্রী-ও ফেরেনি। নেই ফুটপাত। গলি বা মূল সড়ক কোথাও গাড়ি-সাইকেল রাখার নির্দিষ্ট স্থানও নেই। ১, ৪, ১১, ২৯, ৩২, ৩৩, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু অংশে এখনও মোরাম রাস্তা রয়েছে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জয় কর বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডের রাস্তা তো চলার অযোগ্য। অন্যত্রও রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এখন ভোটের আগে এলাকায় কাজ দেখছি।’’

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরি করতে হয় পুরসভাকে। খড়্গপুর শহর জুড়ে রেলের একাধিক মাঠ বা পার্ক থাকলেও সংস্কারের অভাবে সেগুলি ধুঁকছে। পুর এলাকায় সে ভাবে খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পার্ক থাকলেও সেটি ভগ্নপ্রায়। দোলনা বা স্লিপার নেই। ওই পার্ক চত্বরেই একটি ঘরে পাড়ার কিছু যুবক আনাগোনা করে। তাদের মধ্যেই অতনু পাত্র, প্রসেনজিৎ সাঁতরা বলেন, ‘‘আমরাই এই পার্কটিকে নানা ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু অর্থাভাবে পারিনি। কাউন্সিরলকে বলেও লাভ হয়নি।’’

বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, ‘‘আমরা দেড় বছরে শহরের সৌন্দর্যায়নে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। মূল সড়কগুলিতে আলো বসেছে। বিভিন্ন রাস্তার মোড় মূর্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে। তবে পার্ক করার জন্য যে জমি প্রয়োজন তা আমাদের নেই।’’ ফের ক্ষমতায় এলে কি এগুলি নিয়ে ভাববেন? পুরপ্রধানের জবাব, ‘‘এখন শহরে নিকাশির উন্নয়ন সব থেকে জরুরি। তাই আগামী পুরবোর্ড আমাদের হলে আগে নিকাশি সমস্যার সমাধান করব। এটা এ বারের প্রধান প্রতিশ্রুতি। এ জন্য মাস্টার প্ল্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন