midnapore

রেলশহরের পাশেই শ্যুটআউট, গুলি চালিয়ে লুটপাট পাম্পে

তিন রাউন্ড গুলি চালিয়ে হল পেট্রল পাম্পে ডাকাতি করল দুষ্কৃতীরা। খড়্গপুর গ্রামীণ থানার চাঙ্গুয়ালের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়গপুর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২১ ০৭:৪২
Share:

পাম্পের অফিসঘরের কাচের দেওয়াল ফুঁড়ে দিয়েছে বুলেট।

পাম্পের অফিসঘরের কাচের দেওয়াল ফুঁড়ে দিয়েছে বুলেট।

Advertisement

এ যেন ঠিক চেনা ছন্দ! বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রেলশহরে ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রেলশহর। বাড়ছে গুলির শব্দ। বাড়ছে শ্যুটআউট, দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যও।
ঠিক যেমন বৃহস্পতিবার রাতে ফের শ্যুটআউটের সাক্ষী হল খড়্গপুর। তবে এ বারের ঘটনাস্থল অবশ্য শহর নয়, বরং রেলশহর ঘেঁষা খড়্গপুর গ্রামীণ থানা এলাকা। তিন রাউন্ড গুলি চালিয়ে হল পেট্রল পাম্পে ডাকাতি করল দুষ্কৃতীরা। খড়্গপুর গ্রামীণ থানার চাঙ্গুয়ালের ঘটনা।
ওই দিন রাতে খড়্গপুর-ভুবনেশ্বর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ওই পেট্রল পাম্পে ছ’জনের একটি ডাকাতদল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হানা দেয় বলে অভিযোগ। পেট্রল পাম্পে ঢুকে কর্মীদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে লুটের পরে পরপর তিন রাউন্ড গুলি চালিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। ডাকাতির ধরন নিয়ে শুরু হয়েছে শোরগোল। অভিযোগ, পুরোটাই খুব ঠান্ডা মাথায় করেছে দুষ্কৃতীরা। হেঁটে পাম্পে ঢুকে লুট করে চলে গিয়েছে। গোটা ঘটনা ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরায়।
খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার বলেন, “তিন রাউন্ড গুলি চালিয়ে ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা গোটা ঘটনার তদন্ত করছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি। তবে কাউকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তবে দ্রুত ঘটনার কিনারা হবে।” প্রতিবার নির্বাচনের আগে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে অশান্ত হয় রেলশহর। এ বার নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই সেই আশঙ্কা করছিলেন বিরোধীরা। গত একমাসের ঘটনাক্রমও সেই ইঙ্গিত দিয়েছে। শহর থেকে সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। মাসখানেক আগে বড়দিনের রাতে খড়্গপুর শহরের বোগদার পেট্রল পাম্পে পিস্তল দেখিয়ে লুটপাট চলে। ওই ঘটনাতেও দুষ্কৃতীরা পায়ে হেঁটে হানা দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার পরে নতুন বছরের প্রথম সন্ধ্যায় গুলি করে খুন করা হয়েছে এক সাট্টা কারবারি দুষ্কৃতীকে। চাপের মুখে ধারাবাহিক অভিযানে শহর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত বহু দুষ্কৃতীকে হাতেনাতে পাকড়াও করেছে পুলিশ। এমনকি খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও, গ্রামীণ থানার ওসির পরপর বদলির পরেও সেই দুষ্কর্মের ধারা অব্যহত। এ বার শহর ছাড়িয়ে সেই প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ এলাকাতেও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ৬০নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে চাঙ্গুয়ালের ওই পেট্রল পাম্পের বাইরে তিনটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। পাম্প অফিসের ভিতরে ম্যানেজার ছাড়াও ছিলেন ছ’জন কর্মী ও দু’টি গাড়ির চালক। বাইরে দুই কর্মী কর্তব্যরত ছিলেন। খড়্গপুরগামী লেন দিয়ে ওড়িশার দিক থেকে হেঁটে এসে পেট্রল পাম্পে ঢোকে চারজন। প্রথমেই পাম্পে কর্তব্যরত দু’জন কর্মীর একজনের পেটে পিস্তল ও একজনের পেটে ভোজালি ঠেকিয়ে অফিসঘর পর্যন্ত নিয়ে যায়। তার পরেই আরও দু’জন দুষ্কৃতী এসে অফিসঘরের কাচে গুলি করে টাকার বাক্স থেকে টাকা লুট করে বেরিয়ে যায়। পরে এক কর্মী লাঠি নিয়ে ধাওয়া করতে গেলে দু’দিক থেকে আরও দু’রাউণ্ড গুলি চালিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাম্পের ম্যানেজার রঞ্জন মহারাজ বলেন, “পায়ে হেঁটে ওড়িশার দিক থেকে এসেছিল। ফের লুট করে ওদিকেই চলে গিয়েছে। হয়তো দূরে কোথাও গাড়ি ছিল। হিন্দিতে কথা বলছিল। ভয় তো লাগছেই। আসলে আগে আমাদের পাম্পের কাছে পুলিশ গাড়িতে সারারাত থাকত। এখন থাকে না। সেই টহলদারি আবার চালু হলে ভাল হয়।”
ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছে স্থানীয়রাও। চাঙ্গুয়ালের বাসিন্দা সঞ্জয় দোলুই বলেন, “চাঙ্গুয়ালে জাতীয় সড়কের পুলের তলায় পুলিশ এখন বালি গাড়ি থেকে টাকা তুলতেই ব্যস্ত থাকে। তাই দুষ্কৃতীরা নির্দ্বিধায় লুট করে। সব কিছু হওয়ার পরে পুলিশ আসে। এ ভাবে গুলি চললে তো স্থানীয় মানুষের জীবনহানিও হতে পারে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন