কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্ত করতে হবে— এই দাবিতে এ বার কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াচ্ছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচিতে আজ, সোমবার ও কাল, মঙ্গলবার নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে বিশাল জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে।
মূলত তিনটি দাবিতে কুড়িমের এই দিল্লি অভিযান। দাবিগুলি হল, কুড়মিদের পুনরায় আদিবাসী তালিকাভুক্ত করতে হবে, কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ‘কোড’-সহ সারনা ধর্মের স্বীকৃতি দিতে হবে। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ এ রাজ্যের কয়েক হাজার কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ ইতিমধ্যে দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন। আদিবাসী কুড়মি সমাজ ছাড়াও এই কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে ওড়িশা কুড়মি সেনা, ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা ও অসম টোটেমিক কুড়মি সমাজ। রামলীলা ময়দানের সমাবেশ মঞ্চে কুড়মি সংস্কৃতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হবে। রামলীলা ময়দানে সমাবেশ মঞ্চ তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই কর্মসূচির পাশাপাশি, যন্তরমন্তরে ধর্নাতেও বসা হবে বলে জানিয়েছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাতো। রাজেশ জানান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অসম থেকে কয়েক হাজার কুড়মি সমাবেশে যোগ দেবেন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে।
গত এক বছর ধরে রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন রাজেশরা। এর আগে দিল্লিতে গিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়-সহ কেন্দ্রীয় স্তরের আমলাদের কাছে দাবি সনদ জমা দেওয়া হয়েছে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের দাবিটি নিয়ে দলমত নির্বিশেষে কুড়মি সমাজের সকলেই সহমত। রাজেশ জানালেন, ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন ভারতে কুড়মিরা আদিবাসী তালিকাভুক্ত ছিলেন। ১৯৩১ সালের আদমসুমারির রিপোর্টে কুড়মিদের আদিম জনজাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৫০ সালে নতুন করে তফসিলি উপজাতি তালিকা তৈরির সময় কোনও এক অজ্ঞাত কারণে কুড়মি-জনজাতি বাদ পড়ে যায়। সেই থেকে নানা সময়ে নানা ভাবে চলছে কুড়মিদের পুনরায় আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন। সেই আন্দোলনকে দীর্ঘদিন ধরে সংঙ্ঘবদ্ধ রূপ দিয়ে এগিয়ে চলেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।
২০১৭ ও ২০১৮ সালে আদিবাসী কুড়মি সমাজের উদ্যোগে তিন দফা দাবিতে রেল অবরোধ ও জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কুড়মালিকে দ্বিতীয় রাজ্যভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। রাজ্যের তরফে কুড়মি জাতির আদিবাসী তালিকা অন্তর্ভুক্তির স্বপক্ষে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। ওই রিপোর্ট খারিজ করে ফের রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্র। রাজেশদের অভিযোগ, এই অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলই কুড়মি-আবেগ নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিছু মানুষ সমাজ-সংগঠনে বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে কুড়মি সমাজের এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন বহু মানুষ।