মেলেনি প্রকল্পের টাকা

ঘরে ফিরব কেন, প্রশ্ন শ্রমিকদের

ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ কাজ করেন ভিন্ রাজ্যে। সংবাদমাধ্যমের ও পরিবারের দৌলতে মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান পৌঁছেছে তাঁদের কাছেও।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০১
Share:

পরিবর্তন: স্বর্ণশিল্পী দেবব্রত পাঁজা এখন চাষের কাজে ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র

ভিন্ রাজ্যে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা যদি কোনও সমস্যা বুঝে রাজ্যে ফিরে আসেন, তবে পাশে থাকবে সরকার, জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার কোটশিলার সভায় মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন, প্রয়োজনে এই শ্রমিকদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা সাহায্যও করবে প্রশাসন।

Advertisement

ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ কাজ করেন ভিন্ রাজ্যে। সংবাদমাধ্যমের ও পরিবারের দৌলতে মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান পৌঁছেছে তাঁদের কাছেও। তবে কাজের কাজ হয়নি। কারণ আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস পাওয়ার পরেও তাঁদের একটা বড় অংশই রাজ্যে ফিরতে নারাজ।

কিন্তু পরিস্থিতি এমন কেন? জানা গিয়েছে, ভিন্ রাজ্যে বাস করা এই মানুষদের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে এই আহ্বানে। তাঁদের দাবি, ‘নোটবন্দি’র সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ‘সমর্থন প্রকল্প’ চালু করলেও সেই টাকা এখনও মেলেনি।

Advertisement

গত বছর ‘নোটবন্দি’র পরই কাজের জায়গা ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন ভিন্ রাজ্যে বাস করা কয়েক হাজার সোনার কারিগর। তাঁদের কেউ আজ চপ-মুড়ির দোকান দিয়েছেন, কেউ গিয়েছেন মাছের ব্যবসায়, কেউ বা চাষের কাজে মাঠে নেমেছেন। সে সময়ে রাজ্য সরকার ‘সমর্থন প্রকল্প’-এর ঘোষণা করেছিল। তবে বছর ঘুরতে চললেও প্রকল্প থেকে এখনও এক টাকাও পাননি দাসপুরের কোনও যুবক। সরকারি সাহায্যের আশা অবশ্য এখন কার্যত ছেড়েই দিয়েছেন তাঁরা। পাঁচ-ছ’মাস আগে থেকেই পুরনো পেশায় ফিরতে শুরু করেছিলেন স্বর্ণশিল্পীরা। মোটামুটি ২০ শতাংশ শ্রমিক বাদ দিলে বাদবাকি প্রায় সবাই ফিরেও গিয়েছেন। চাঁইপাটের বাসিন্দা দেবেন্দ্র পাঁজার কথায়, “আমরা ফিরে এসেছি। তবে বিকল্প কাজ পাইনি এখনও। সমর্থনের টাকাও আসেনি। ফের যদি কিছু লোক ফিরে আসে, তাঁদেরও তো অবস্থা একই হবে!”

অন্য দিকে, দিল্লির করোলবাগের একটি স্বর্ণশিল্পী কারিগর সংগঠনের পক্ষে দীপক ভৌমিক এবং রাজস্থানের জয়পুরের একটি ‌মালিক সংগঠনের কর্মকর্তা নির্মল কুইলা ফোনে জানান, মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের জন্য ভেবেছেন, এটা বড় পাওনা। কিন্তু সমর্থনের টাকা পেলে তবেই ফেরার তাগিদটা তৈরি হতো। রাজ্যে ফিরে গেলে বেকার সমস্যা বাড়বে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি বলেন, “টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। অনেকেই পেয়েও গিয়েছেন। আবেদনকারীরা দ্রুতই টাকা পেয়ে যাবেন।” ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, নোট বাতিলের সময়ে কাজ হারানোর ভয় তৈরি হলেও এখন পরিস্থিতি অনেক ভাল। তাঁরা কাজও পাচ্ছেন, পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। মুম্বইয়ে বছর দশেক কাজ করা দাসপুরের মনোজ দাসের কথায়, “এখানে কাজের পরিবেশ যথেষ্ট ভাল। নিরাপত্তা নিয়েও কোনও সমস্যা নেই। ফিরতে যাব কেন?”

এ দিকে, বিরোধী কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি নেতাদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী যত না শ্রমিকদের পাশে থাকার কথা বলছেন, তার চেয়েও বেশি রাজনীতি করছেন। এই পদক্ষেপকে পঞ্চায়েতের ভোটের আগে ফায়দা তোলার রাজনীতি বলেই মনে করছেন তাঁরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমর মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যদি আন্তরিক ভাবে বলতেন, তা হলে কাজের কাজ হতো। কিন্তু ভোট বড় বালাই। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে এ সব বলতে হচ্ছে।” অন্য দিকে বিজেপি-র ঘাটালের জেলা সভাপতি রতন দত্তের কথায়, “সবাই ফিরে এলে রাজ্য সরকার দায়িত্ব নেবে তো! রাজ্যে অত কর্মসংস্থানের
সুযোগ কোথায়?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন