গোদাপিয়াশাল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

ডাক্তার বাড়ন্ত, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীই দেন ওষুধ

পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ অন্তর্বিভাগ। খোলা শুধু বহির্বিভাগ। সবেধন নীলমণি একজন চিকিৎসকও সবসময় থাকেন না, তখন ভরসা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। শালবনির গোদাপিয়াশাল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমনই হাঁড়ির হাল।

Advertisement

সুমন ঘোষ

শালবনি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

ওষুধ দিচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। নিজস্ব চিত্র।

পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ অন্তর্বিভাগ। খোলা শুধু বহির্বিভাগ। সবেধন নীলমণি একজন চিকিৎসকও সবসময় থাকেন না, তখন ভরসা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। শালবনির গোদাপিয়াশাল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমনই হাঁড়ির হাল। জেলায় এখনও বাগে আসেনি ডেঙ্গি। স্বাস্থ্য দফতর জ্বর হলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই যদি এমন হাল হয়, তাহলে গরিব মানুষ যাবে কোথায়।

Advertisement

এই হাসপাতালের উপর গোদাপিয়াশাল ছাড়াও বেঁউচা, কামারমুড়ি, গোবরু, হাতিমারি, সরস্বতীপুর, মঙ্গলমারি, শৌলা, গুরাই পাটনা-সহ বহু গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নির্ভরশীল। ১০ শয্যার হাসপাতালে দু’জন চিকিৎসক, চারজন নার্স থাকার কথা। আগে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগও চালু ছিল। নিয়মিত ভর্তিও হতেন রোগীরা। দিনকয়েক আগে দু’জনের মধ্যে একজন চিকিৎসক বদলি হয়ে গিয়েছেন। আর একজনও নিয়মিত আসেন না বলে অভিযোগ। ফলে অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি নেওয়াও বন্ধ। বহির্বিভাগেও ভরসা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ আন্ত্রিক হলেও রোগীকে হাসপাতালে রেখে স্যালাইন দেওয়ার সুযোগ মেলে না। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে যেতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ জাশুর অভিযোগ, ‘‘আমি উচ্চ রক্তচাপের রোগী। ফলে মাঝে মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মাপতে হয়। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে এসেও ফিরে যেতে হয়। কারণ, চিকিৎসকের দেখা মেলে না।”

Advertisement

দিন কয়েক আগে সাইকেলে স্ত্রীকে নিয়ে ৩ কিলোমিটার দূরের বেঁউচা গ্রাম থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন সনাতন টুডু। হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরলেন সনাতন। যিনি ওষুধ দিলেন সেই নন্দ দোলুই কিন্তু চিকিৎসক নন। নন্দবাবু হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী! নন্দবাবু বলেন, “চিকিৎসক না এলে আমি বা মুক্তি (আর এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী) ওষুধ দিই।’’ তাঁদের কাছে চিকিৎসকের ফোন নম্বর পর্যন্ত নেই। রোগ ধরার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেন না? নিরুত্তর তিনি। যা থেকে বোঝাই যায়, এ সবের তিনি ধার ধারেন না।

বন্ধ হয়ে গিয়েছে রোগী ভর্তি।

কেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন দশা? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “দু’জন চিকিৎসকেরর মধ্যে একজন মাস কয়েক আগে বদলি হয়েছেন। ফলে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। তাই শয্যায় রোগী রাখা হয় না। কিন্তু বহির্বিভাগ তো খোলা থাকার কথা।’’ রোগীর পরিজনেদের তো অভিযোগ, বহির্বিভাগ খোলা থাকলেও বেশিরভাগ সময় চিকিৎসকের দেখা মেলে না। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নেব।”

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার উপর জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কেন রোগীদের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর থেকে ওষুধ নিতে হবে? জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, শীঘ্রই শালবনি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে একজনকে ডেপুটেশনে গোদাপিয়াশাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হবে। আর একজন নার্সও দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুনরায় রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেও পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন