কর্মিসভায় সুরেশ প্রভু। নিজস্ব চিত্র
রেলশহরের সমস্যা কথা মেনে নিলেন রেলমন্ত্রী। কিন্তু তার দায় চাপালেন রাজ্য থেকে নির্বাচিত পূর্বতন রেলমন্ত্রীদের উপর। এমনই মন্তব্য করে রেলের সঙ্গে যুক্ত মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করলেন রেলমন্ত্রী।
শনিবার ভোট-প্রচারের শেষ বেলায় খড়্গপুরে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। খড়্গপুর সদর কেন্দ্র থেকে এ বার বিজেপির টিকিটে লড়ছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ দিন তাঁর সমর্থনে শহরের রবীন্দ্র ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে কর্মিসভায় যোগ দেন রেলমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্যের পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল রেল। সুরেশ বলেন, ‘‘শুধু ইঞ্জিন ও প্রযুক্তির কারণে নয়, রেল চলে রেলকর্মীদের কারণে। এ ছাড়া যাঁরা রেলের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তাঁরাও রেলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’’ ঘুরিয়ে কর্মসংস্থানের কথাও বলেছেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমাদের দেশে কাজের লোক, শিক্ষা, বুদ্ধির অভাব নেই। সঠিকভাবে আমরা যদি সেগুলি কাজে লাগাই তবে রেল ও দেশ অনেক দূর যাবে।”
ক্রমে তিনি রাজনীতির কথা। নিশানা করেছেন কংগ্রেস-সিপিএম জোটকে। সুরেশ এ দিন বলেন, ‘‘কংগ্রেসের লোককে কমিউনিস্টরা মারধর করত। কংগ্রেস সেই কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে সরব হত। কিন্তু এখানে আমরা দেখছি সেই কমিউনিস্টদের সঙ্গে কংগ্রেস একসঙ্গে রাজ্য শাসন করতে চাইছে। কিন্তু রাজ্য শাসন অনেক দূরের কথা। কারণ বিজেপি তাদের থেকে এগিয়ে রয়েছে।’’
রেলশহর খড়্গপুরে সমস্যার অন্ত নেই। বস্তিবাসীদের বিদ্যুৎ সংযোগে অনুমতি দেয় না রেল, রেল কলোনিতে পানীয় জল, নিকাশি, রাস্তার হালও ভাল নয়। এ দিনও সুরেশ প্রভু আসার আগে গোলবাজার সিমলা সেন্টারে রেল কলোনির বাসিন্দাদের একাংশ নানা সমস্যা নিয়ে সরব হন। রেলমন্ত্রীর কৌশলী মন্তব্য, ‘‘এখানে রেলের অনেক সমস্যা সম্পর্কে আমাকে অবগত করা হয়েছে। তবে আমি হতবাক। ভেবেছিলাম পশ্চিমবঙ্গে রেলের কোনও সমস্যা থাকবে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক বড়বড় নেতা রেলমন্ত্রী হয়েছেন। যদি তাঁরা কাজ করে থাকতেন তবে নিশ্চয়ই সমস্যা থাকত না।’’
পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক অবস্থা নিয়েও এ দিন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুরেশ প্রভু। তাঁর কথায়, “এখন পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা খুব ভয়ঙ্কর। একটা সময় ছিল, কলকাতার নাম লোকে উদাহরণ হিসেবে নিত। যদিও এই কৃতিত্ব কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূলের নয়। এই রাজ্য তৈরি করেছিলেন আপনারা।’’ তাই এই রাজ্য দেশের মধ্যে সবথেকে উন্নত করতে নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতা দরকার বলে তিনি মনে করেন। এ ক্ষেত্রে প্রভু দেশের সরকারের সঙ্গে শহরের মানুষের সেতু তৈরি করতে দিলীপ ঘোষের মতো নেতার পাশে থাকার আর্জি জানান। শেষ দিনের প্রচারে বিজেপির সাংসদ তথা অভিনেতা-সঙ্গীতশিল্পী মনোজ তিওয়ারিও এসেছিলেন। শহরের খরিদা থেকে ইন্দা পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে রোড-শো করেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ।
কংগ্রেস ও তৃণমূলের শহরের শেষ প্রচারও ছিল জমাটি। ৩৩, ৩৪, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে রোড-শো করেছেন কংগ্রেস প্রার্থী, রেলশহরের চাচা জ্ঞানসিংহ সোহন পাল। শহবাসীর কাছে কখনও হাত জোড় করে কখনও হাত নেড়ে সমর্থন চেয়েছেন নবতিপর যোদ্ধা। সঙ্গে ছিলেন প্রার্থীর এজেন্ট খড়্গপুর পুরসভার বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে। প্রচার শেষে রবিশঙ্করবাবু বলছিলেন, “আমরা কয়েকদিন প্রচার করেই ভাল সাড়া পেয়েছি। আশা করছি ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হবেন চাচা।”
এ দিন ২, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে পদযাত্রা করে তৃণমূল। ছিলেন দলের প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারি। এর পরে বিকেলে ইন্দায় একটি সভায় যোগ দেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। প্রচারের শেষবেলায় তৃনমূল প্রার্থী বলছেন, “এই ক’দিন যেভাবে মানুষের সাড়া পেয়েছি তাতে জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।”