ভোটদানের পাঠ দান, গান বেঁধে দোরে হাজির সৃজা-সৌম্যরা

প্রত্যেকেই কোলাঘাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী। লোকসভা নির্বাচনে ভোটারদের ভোটদানের গুরুত্ব বোঝাতে এঁদের কেউ লিখেছেন গান, তাকে সুরে বেঁধেছেন কেউ।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৮
Share:

ভোট দানের প্রক্রিয়া বোঝাতে চলছে প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

চড়া রোদ্দুর উপেক্ষা করেই ভোট-প্রচারে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে নেতা-কর্মী সবাই। নির্বাচনের আগে কী ভাবে অনেক বেশি ভোটারের কাছে পৌঁছনো যায় তা নিয়ে ব্যস্ততা বিভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে। ব্যস্ত কোলাঘাটের কলেজ পড়ুয়া সৃজা, সৌম্যরাও। তবে ওঁরা একা নন, রয়েছেন আরও অনেকে। এঁদের কেউ শিল্পী, কেউ আটপৌরে গৃহবধূ, কেউ আবার ব্যবসায়ী। ভোট দেওয়া নিয়ে ভোটারদের উৎসাহ দিতে, সচেতন করতে ভোটের মরসুমে কোলাঘাটের সমস্ত গ্রামে দিনরাত চলছে এঁদের অরাজনৈতিক অভিযান। ‘ভোটবাবুদের’ এ ভাবে কাছে পেয়ে খুশি ভোটাররাও।

Advertisement

প্রত্যেকেই কোলাঘাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী। লোকসভা নির্বাচনে ভোটারদের ভোটদানের গুরুত্ব বোঝাতে এঁদের কেউ লিখেছেন গান, তাকে সুরে বেঁধেছেন কেউ। কেউ গাইছেন সেই গান। হারমোনিয়াম, খোল, ঝুনঝুনি নিয়ে এঁরা পৌঁছে যাচ্ছেন বিভিন্ন বাজার, রাস্তার মোড়ে কিংবা মন্দিরে। শুরু হয়ে যাচ্ছে মানুষকে ভোট দানের পাঠ দান।

কিন্তু কী ভাবে?

Advertisement

তিরিশ সদস্যের দলটি টোটো বা কোনও গাড়িতে করে প্রথমে জনবহুল এলাকায় গিয়ে শুরু করছেন গানবাজনা। গানের কথায় উঠে আসছে সরকার গঠনে একজন ভোটারের ভোটদানের গুরুত্বের কথা। নতুন ধরনের গান টেনে আনছে অনেককেই। আর তখনই ওই কর্মীরা হাতে তৈরি নকল ইভিএম, ভিভিপ্যাট দিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দানের পদ্ধতি হাতেকলমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন জনতাকে। তারপর উপস্থিত ভোটারদের জন্য থাকছে ক্যুইজ প্রতিযোগিতা। সফল প্রতিযোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার।

স্বাধীনতার পর থেকে জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে কতগুলি ভোট হয়েছে। কারাই বা বিভিন্ন মন্ত্রক সামলে ছিলেন এমন হাজারো তথ্য সংবলিত পুস্তিকা ছাপানো হয়েছে সংস্থার তরফে। ক্যুইজের পর উপস্থিত জনতার মধ্যে সেই পুস্তিকা বিলি করছেন সংস্থার কর্মীরা। গত সাতদিন ধরে কোলাঘাটের বিভিন্ন জায়গায় চলছে এমন অরাজনৈতিক ভোট-প্রচার। ১২ মে জেলায় নির্বাচন। তার আগে ৯ মে পর্যন্ত এই কর্মকাণ্ড চলবে। কোলাঘাটের বাসিন্দা তাপস বৈদ্য বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রচার অভিনব। এতে ভোটাররা ভোটদান সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন হবেন।’’ গত সাত দিনে কোলাঘাটের বিভিন্ন এলাকায় সংস্থার উদ্যোগে ৪২টি প্রচার কর্মসূচি হয়েছে। লক্ষ্য কোলাঘাট ব্লকের প্রতিটি গ্রামে এই কর্মসূচি করা। কর্মসূচি রূপায়ণে ইতিমধ্যেই খরচ হয়েছে প্রায় তিরিশ হাজার টাকা। টাকার সংস্থানের প্রশ্নে সংস্থার সদস্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা নিজেরা টাকা দিয়ে তহবিল গড়ে এই খরচ চালাচ্ছি। তবে টাকার অভাবে কোলাঘাটের বাইরে প্রোগ্রাম করতে যেতে পারি না।’’

শুধু ভোট প্রচার নয়, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রোগ্রামের প্রচার চালিয়ে এই সংস্থা পরিবহণ দফতরের তরফে জেলায় বিশেষ পুরস্কারও পেয়েছে। প্লাস্টিক বর্জন কর্মসূচি নিয়েও এঁরা কাজ করে চলেছেন। সংস্থার এক সদস্য সৃজা সরকারের কথায়, ‘‘ভোট দিতে গিয়ে অনেকেই রাগ করে নোটায় ভোট দেন। কিন্তু আমরা চাই সরকার গঠনে মতামত থাকুক সকলের। তাই মানুষকে ভোটদান নিয়ে সচেতন করতেই এই কর্মযজ্ঞ।’’

সংস্থার কাজে খুশি জেলা শাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ওঁদের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই। আমার বিশ্বাস এর ফলে ভোটদান বিষয়ে মানুষ যথেষ্ট সচেতন হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন