Lok Sabha Election 2019

কিনতে হয় জল, পারে ক’জন!

সারা বছর বাড়ির পাতকুয়োর জলে প্রয়োজন মেটে কুনারের পরিবারের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৫৩
Share:

জলের জেরিকেন আসার পরে নিশ্চিন্ত বিজেপি প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র

কলকাতায় দলের বৈঠক সেরে মঙ্গলবার কাকভোরে বাড়ি ফিরেছেন। তারপর ঘন্টা দেড়েক ঘুমিয়ে উঠেই জল এল কিনা খোঁজ নিচ্ছিলেন কুনার হেমব্রম। জলের জেরিকেন দোরগোড়ায় পৌঁছনোর পরে নিশ্চিন্তে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।

Advertisement

অরণ্যশহর-ঘেঁষা কন্যাডোবা গ্রামে বাড়ি ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বছর সাতান্নর কুনারের। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মানুষটির নিজস্ব কনসাল্টেন্সি ফার্ম রয়েছে। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বাড়িতে সাব মার্সিবল পাম্প বসাননি তিনি। সারা বছর বাড়ির পাতকুয়োর জলে প্রয়োজন মেটে কুনারের পরিবারের। কিন্তু চৈত্র-বৈশাখে পাতকুয়োর জল তলানিতে নেমে যায়। তখন ঝাড়গ্রাম শহর থেকে জল কিনে আনা ছাড়া উপায় থাকে না।

কুনার জানালেন, স্ত্রী, ছেলে, দুই মেয়ে-সহ তাঁদের যৌথ পরিবারের সদস্য জনাদশেক। এ ছাড়া টিকু, হালুম, গুলটি, সুইটি-র মতো সাতটা দিশি কুকুর রয়েছে। তাই জল লাগে বেশি। প্রতিদিন তিনটি জারে ৬০ লিটার জল কিনতে খরচ পরে ৭৫ টাকা। কুনারের স্ত্রী মিনতি বলেন, ‘‘ঘরে তো শুধু আমরা নই, আরও পুষ্যি রয়েছে। তাই বেশি জল কিনতে হয়।’’ আর কুনার বলছিলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রচারসর্বস্ব উন্নয়ন তো কতগুলো ভবন আর কিছু দলের লোকজনকে খয়রাতি পাইয়ে দেওয়া। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ কোথায়? আমার এলাকায় পানীয় জলের কষ্ট তো আমার বাড়িতে এসেই টের পাচ্ছেন। কিন্তু কটা লোক রোজ জল কিনে খেতে পারে!’’

Advertisement

ঝাড়গ্রাম পুর এলাকা থেকে বিজেপি প্রার্থীর বাড়ি দেড়শো মিটারও নয়। পিচ রাস্তার এক দিকে ঝাড়গ্রাম শহরের বামদা, উল্টো দিকে ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্যাডোবা গ্রামীণ এলাকা। কুনার যেখানে থাকেন গ্রামের সেই মার্শাল পাড়ায় আদিবাসী পরিবারের বাস। অধিকাংশ বাড়িতেই জলের ভরসা পাতকুয়ো। হাতে গোনা কয়েকজন সাব মার্সিবল পাম্প বসিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী কারু সরেন, রেলকর্মী পেরো সরেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্যঙ্ককর্মী রঘুনাথ হাঁসদারা বলছিলেন, ‘‘শহর লাগোয়া হলেও আমাদের এই এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। গরম পড়লেই পাতকুয়ো শুকিয়ে যায়। তখন বাইরে থেকে জল আনতে হয়।’’ কন্যাডোবা থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় আড়াইশো মিটার দূরে রয়েছে ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুর ও শ্রীরামপুর এলাকা। উত্তর দিকে রয়েছে শহরের বামদা এলাকা। পুর এলাকায় পানীয় জলের টাইম কল থাকলেও পঞ্চায়েতের তেষ্টা মেটেনি।

তৃণমূল পরিচালিত রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পুড়গি সরেনের অবশ্য দাবি, ‘‘এলাকায় পানীয় জলের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। তা-ও কোথাও সমস্যা হলে অবশ্যই পদক্ষোপ করব।’’ আর ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর জন্য আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সমস্যা মেটাতে কাজও হচ্ছে।’’

ঝাড়গ্রাম পুর এলাকায় একশো কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহ প্রকল্প কার্যকরী করতে প্রায় সব ওয়ার্ডে পাইপ লাইন বসেছে। পুরসভার প্রতিশ্রুতি, লালগড়ের বৈতা এলাকা থেকে কংসাবতী নদীর জল তুলে পরিস্রুত করে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হবে। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। ওই জল প্রকল্পের আওতায় শহর-ঘেঁষা গ্রামীণ এলাকাগুলিকেও আনার দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চৈত্র-বৈশাখের তীব্র গরমে ভোট প্রচারে জলকষ্ট যে হাতিয়ার হবে, তা কুনারের কথায় স্পষ্ট। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে গত পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিল থেকে কার্যত কোনও বরাদ্দই হয়নি বলে অভিযোগ কুনারের। জবাবে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদার জবাব, ‘‘উনি চোখে ঠুলি পরে আছেন, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না। আর ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন