সৈনিক: শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে গতবার দলের জেতা সাংসদদের উপর ভরসা করতে পারেননি তৃণমূল নেত্রী। তাঁদের জায়গায় নতুন মুখ এনেছেন তিনি। রাজ্যে আরও কয়েকটি লোকসভা কেন্দ্রেও প্রার্থী বদল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে দলকে জেতাতে অধিকারী পরিবারের উপরেই যে তিনি আস্থা রাখেন, ফের তার প্রমাণ দিলেন। জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্র কাঁথি ও তমলুকে প্রার্থী করলেন দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী ও তাঁর ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারীকে।
মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটাল লোকসভায় চিত্রতারকা দেবকে (দীপক অধিকারী) ফের প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে গতবারের জয়ী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে সরিয়ে এবার প্রার্থী করা হয়েছে বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়াকে। মানসবাবু বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের গতবারের জয়ী সাংসদ উমা সরেনকে সরিয়ে এবার প্রার্থী করা হয়েছে বীরবাহা সরেনকে। ওই দুই লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করা হলেও তৃণমূলের শক্তঘাটি হিসেবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরে এবারেও অধিকারী পরিবারের উপরেই ভরসা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী।
গত লোকসভায় তমলুক কেন্দ্রে শুভেন্দু অধিকারী ও কাঁথি কেন্দ্রে শিশির অধিকারী জিতে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় গত বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুবাবু নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন এবং জিতে পরিবহণ মন্ত্রী হন। ফলে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিল দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক ও শুভেন্দুবাবুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীকে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিধানসভা ভোটে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা তমলুক, হলদিয়া ও পূর্ব পাঁশকুড়া এই তিন কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীরা পরাজিত হলেও লোকসভার উপ-নির্বাচনে দিব্যেন্দু ওই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রেই লিড নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ফলে জেলায় তৃণমূলের আধিপত্য বজায় থাকে। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয় তৃণমূল। তবে গত কয়েক বছরে জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই বদলেছে। দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার উপ-নির্বাচন থেকে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের পিছনে ফেলে প্রধান বিরোধীর ভূমিকায় উঠে এসেছে বিজেপি। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির সঙ্গে এবার জোরদার লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন মমতা। তাই দলের শক্তঘাঁটি হলেও পূর্ব মেদিনীপুরে জয় নিয়ে নিশ্চিত করতে জেলায় দলের কান্ডারী শুভেন্দু ও শিশিরবাবুর উপরেই ভরসা রেখেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
যদিও বয়সের কারণে এ বার লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি কেন্দ্রে ফের শিশিরবাবুকে প্রার্থী করা নিয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বেরই একাংশ কিছুটা সংশয়ে ছিলেন। এদিন প্রার্থী পদ ঘোষণা পর শিশিরবাবু বলেন, ‘‘আমার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কিছু মানুষ অপপ্রচার করেছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটে লড়তে আমার কোনও অসুবিধা নেই। এখনও মানুষের পাশে থেকে কাজ করার ক্ষমতা রাখি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘জেলায় ৬৫ শতাংশ ভোট তৃণমূলের। বিরোধীদের এখানে সাংগঠনিক শক্তিই নেই আমাদের সঙ্গে লড়াই করার। গতবারের চেয়েও এবার বেশি ভোটে জিতব।’’
দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তমলুকের মানুষ আমাকে উপনির্বাচনে জিতিয়েছিলেন। সাংসদ হয়ে তাঁদের জন্য যথাসাধ্য কাজ করেছি। আশা করি, তমলুকের মানুষ এবারও আমাকে বিপুলভোটে জয়ী করবেন।’’
বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘সাংসদ হিসেবে দু’জনকেই মানুষ দেখেছেন। কেউই সাংসদ হিসেবে ছাপ ফেলতে পারেননি। কেবল দলনেত্রীর প্রতি আনুগত্যের জন্যই তাঁদের ফের প্রার্থী করা হয়েছে।’’