ঘাটাল পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে দেবের রোড শো। নিজস্ব চিত্র
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তথা বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে সোনা প্রতারণা মামলায় দাসপুরে তখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। ঠিক সেই সময়েই ঘাটাল শহরে গাড়ি থেকে হাত নেড়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে জনসংযোগ সারলেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব)। এবারের লোকসভা ভোটের প্রচারে এটাই ছিল তাঁর প্রথম রোড-শো। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের রোড-শোয়ের মতো ভিড় হয়তো শুক্রবার ছিল না। কিন্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, রোড-শোয়ে ফলে ঘাটালের ভোট ময়দানের ‘ঝিমুনি’টা তো অন্তত কিছুটা কাটল!
এ দিন সকালে সাড়ে ১০টায় ঘাটালের এক নম্বর ওয়ার্ডের শুকচন্দ্রপুর থেকে শুরু হয় দেবের রোড-শো। শহরের মূল রাস্তা এবং বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে যত এগিয়েছে রোড-শো, মোড়ে মোড়ে তারকা প্রার্থীকে দেখতে ভিড় জমেছে তত। গত লোকসভা ভোটে ঘাটালের কিছু অংশে রোড শো করেছিলেন তিনি। এবার অবশ্য দেব শহরের বেশিরভাগ জায়গায় চষেছেন। গিয়েছেন গ্রামীণ এলাকাতেও। শিলাবতী নদীর দুই পাড়ে ঘুরে সন্ধ্যায় শেষ হয় দেবের রোড শো।
চলতি লোকসভা ভোটের প্রচারে এর আগে যতবারই নিজের লোকসভা কেন্দ্রে এসেছেন দেব, প্রত্যেক বারই তাঁকে দেখা গিয়েছে পুরোদস্তুর রাজনীতিক হিসাবে। করেছেন কর্মিসভা। সেখানে তাঁর কথাবার্তাতেও উঠে এসেছে রাজনীতিরই প্রসঙ্গ। কিন্তু এ দিন ঘাটালবাসী দেবকে পেলেন পুরনো ছন্দে। যেখানে রাজনীতিকের বদলে উঠে এসেছে তারকা দেবের ছবি।
ছাই রঙের হুড দেওয়া কুর্তা-জিনস্। চোখে সানগ্লাস। করজোড়-হাসিমুখ— শহরের ১৭টি ওয়ার্ডের গোটা চল্লিশেক অলিগলির ঘোরার সময় এভাবেই দেখা গিয়েছে ঘাটাল কেন্দ্রের তৃণমূলের তারকা প্রার্থীকে। রোড-শো শুকচন্দ্রপুর, আড়গোড়া, বিবেকানন্দ মোড়, কৃষ্ণনগর, কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড হয়ে যায় শহরের আলামগঞ্জ, গম্ভীরনগর রথতলা, চাউলি, সিংহপুরে। দুধের বাঁধ হয়ে নিশ্চিন্দিপুরের কাছে রোড শো শেষ হয়। সন্ধ্যায় নিমতলা ঘেঁষা সাদিচক এবং রত্নেশ্বরবাটি গ্রামে কর্মিসভা করেন দেব।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রোড-শোয়ের বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে দেব কোলে তুলে নেয় শিশুদের। অনুগামীদের কাছে থেকে মালা পরা থেকে শুরু করে সই বিলি, মিষ্টি-জল খাওয়া, মালা পরা— সবই করেন হাসিমুখে। তবে এর ফাঁকেই মাইক্রোফোনে বলেন, “আপনারা তো ভোট দেন। জানি। আজ, আশীর্বাদ চাইতে এসেছি।”
এ দিন ঘাটালের আবহাওয়া ছিল ভোট প্রচারের অনুকূল। কখনও রোদ, তো কখনও মেঘলা আকাশ। ভ্যাপসা গরমও ছিল না। ফলে শুরু থেকেই দেবের রোড শো জমতে শুরু করে। আর গ্রামীণ এলাকায় দেবের গাড়ি ঢুকতেই এলাকার একবারে নবীন-প্রবীণ সকলেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। ফুলও ছুড়ে দেন। তাঁদের কথায়, ‘‘বরাবরই গ্রামীণ এলাকাগুলি বঞ্চিত। হাইপ্রোফাইল প্রার্থী দূর, কোনও দলের প্রার্থীই এই সব এলাকায় আসেন না। তাই ভাল লাগল।’’ আর এ দিনের শো ঘিরে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে বলতে শোনা গেল, “ঘাটালটা কেমন যেন ঝিমিয়ে ছিল। ভোট হচ্ছে বলে বোঝাই যাচ্ছিল না। দেবের রোড-শোয়ে সেই ঝিমুনিটা কাটল!’’