নিজে আসুন সাংসদ, হা পিত্যেশ গ্রামে

গোকুলে বাড়ছে গেরুয়া

ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্র শহর এবং গ্রামের মিশেল।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল     শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৮
Share:

অবহেলায় পড়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ভিত্তিপ্রস্তর।নিজস্ব চিত্র

ইড়পালা গ্রাম। চায়ের দোকানে জমেছে সান্ধ্যকালীন আড্ডা। এ কথা, সে কথার মাঝে ভোটে নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক আড্ডাবাজ বললেন, ‘‘শুনেছি অনেক উন্নয়ন হয়েছে। চোখে পড়ছে কই?”

Advertisement

এ বার গন্তব্য মোহনপুর গ্রাম। মাঠে চাষাবাদের কাজ সেরে দুপুরে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন কয়েকজন। এই পাঁচ বছরে উন্নয়ন হয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে ধেয়ে এল পাল্টা প্রশ্ন। একজন বললেন, ‘‘যেটুকু করার রাজ্য সরকার করেছে। সাংসদ নিজে কী করেছেন!”

ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্র শহর এবং গ্রামের মিশেল। দু’টি পুরসভা ঘাটাল আর খড়ার। দু’টিই তৃণমূলের দখলে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১২। এখানেও কোনও বিরোধী নেই। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদেও শাসক দলের প্রভাব নিরঙ্কুশ। তবু গোকুলে বাড়ছে গেরুয়া।

Advertisement

ঘাটাল এমন একটি জনপদ জেলা সদর মেদিনীপুরের থেকে যার ঘনিষ্ঠতা বেশি হাওড়া-কলকাতার সঙ্গে। কারণটা আর কিছুই নয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। মহকুমা জুড়ে প্রবাহিত হয়েছে শিলাবতী নদী। একই সঙ্গে যা ঘাটালবাসীর রুটি-রুজি আবার দুঃখও। আরেক পাশে আবার রয়েছে রূপনারায়ণ নদ। একসময় ঘাটাল ছিল বাম দুর্গ। রাজ্যে পরিবর্তন হতেই পাল্টে গিয়েছে ঘাটালও। ভোট এলেই চর্চা শুরু হয় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে। চলে দোষারোপের পালা। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরে কী পেয়েছে ঘাটাল?

বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে যা দেখা গেল, সংক্ষেপে তা অনেকটা এরকম—গ্রামে পাকা রাস্তা হয়েছে। নলূকপ বসেছে। সেচ, বিদ্যুৎ, শিক্ষা-সহ বিভিন্ন রকমের বিমার সুযোগও হয়েছে। একই ভাবে এগিয়েছে শহরও। ঘাটালে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কের উপর দু’টি কজওয়েতে তৈটি হয়েছে উড়ালপুল। বৃষ্টি হলেও এ বার ঘাটালে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়নি।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গতবারের সাংসদ দেব এ বারও এখানে তৃণমূল প্রার্থী। একাধারে রূপোলি পর্দার নায়ক আবার জনপ্রতিনিধিও। সাংসদকে এলাকায় দেখা গিয়েছে? অনেকে বলছেন না। কারও আবার মত, সবকিছু সামলে যতটুকু তিনি ঘাটালের জন্য করেছেন তা যথেষ্ট। ঘাটাল ও খড়ার পুর শহরে আবার সাংসদ কোটার টাকায় বেশ কিছু পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সাংসদ কোটার টাকায় তেমন কিছু উন্নয়ন হয়নি গ্রামে।

ঘাটালে সে ভাবে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নেই। এ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে শাসক দল। তবে দ্বন্দ্ব না থাকলেও রয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। তাঁদের নিয়ে অস্বস্তি কাটছে না তৃণমূলের। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঘাটাল বিধানসভা এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার লিড পেয়েছিল তৃণমূল। শতাংশের হিসেবে তৃণমূল পেয়েছিল ৫৪.৬৫ শতাংশ ভোট। বামেরা পেয়েছিলেন ২৯.৪৮ শতংশ। বিজেপি পেয়েছিল ৭.৭৭ শতাংশ। কংগ্রেস ৪.৬২ শতাংশ। ২০১৬ সালে ঘাটাল বিধানসভায় তৃণমূল পেয়েছিল ৫০.২৯ শতাংশ ভোট। জোট প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪১.২০ শতাংশ। বিজেপি পেয়েছিল ৪.৮৯ শতাংশ। পঞ্চায়েত ভোটে আধিপত্য দেখিয়েছে তৃণমূল।

দেবের বিরুদ্ধে এ বার বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ। প্রাক্তন পুলিশ সুপার হিসাবে তাঁর দাপটের কথা এলাকাবাসীর অজানা নয়। তবে ব্যক্তিগত ক্যারিশমার পাশাপাশি রয়েছে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে প্রকাশ্যে আসে, সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। ফল অনুকুল না হলেও শাসক দলকে লড়াইয়ে ফেলেছিল বিজেপি। এমনকি, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দলুইয়ের নিজের অঞ্চলে ৪টি আসন দখল করেছিল বিজেপি।

শঙ্কর অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। তাঁর মন্তব্য, “এ বার ঘাটাল থেকেই অন্তত ৫০ হাজার লিড পাবে দলের প্রার্থী। বিজেপির যতই হাই-প্রোফাইল প্রার্থী দিক, ঘাটালের মানুষের জনসমর্থন আদায় করা এত সহজ কাজ নয়।” ঘাটাল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ মাঝি বলছিলেন, “ঘাটালের মানুষ তৃণমূলকেই ভরসা করে। পঞ্চায়েত ভোটেই তার বড় প্রমাণ।” বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অন্তরা ভট্টচার্য বলেন, “ঘাটালের তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা তলে তলে যোগাযোগ রাখছে। তা ছাড়া ঘাটালে গত পাঁচ বছরে তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি। সাংসদের সার্টিফিকেট পেতেও একশো বার ঘুরতে হয়েছে। ঘাটালে বিজেপি সংগঠন বেশ মজবুত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন