বিক্ষোভ: দুর্ঘটনার পর হলদিয়া-মেচেদা সড়কে। রবিবার নিজস্ব চিত্র
পাথরবোঝাই লরির ধাক্কায় এক ট্যাক্সিচালকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রবিবার উত্তেজনা ছড়াল নন্দকুমার থানার খঞ্চি বাজার এলাকায়। হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে এদিন বিকেল ৪টে নাগাদ ওই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা মৃতদেহ আটকে রেখে জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু করেন। অবরোধের জেরে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলগামী পণ্যবাহী লরি ছাড়াও বিভিন্ন যানবাহন আটকে পড়ে। আটকে পড়েন দিঘাগামী বহু পর্যটক। ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় । পরিস্থিতি সামাল দিতে নন্দকুমার থানার পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ আলোচনার আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অবোধ ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, জাতীয় সড়কের উপরেই পাথরকুচি বা বালিবোঝাই লরি আটকে পুলিশ তোলা আদায় করে। পুলিশের অত্যাচার থেকে বাঁচতে গিয়ে এর আগেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। ঘটা করে পুলিশের তরফে সে সব পালন করা হলেও এ ধরনের কাজ বন্ধ হচ্ছে না। যার পরিণতিতে আর একটি মৃত্যু ঘটনা ঘটল।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘ওই এলাকায় পুলিশের নাকা চলছিল। তা নিয়ে হয়তো এলাকায় ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা তোলার যে অভিযোগ উঠে সে বিষয়ে অবশ্য খোঁজখবর নেওয়া হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার নিউ ব্যারাকপুর এলাকার বাসিন্দা একটি পরিবার ট্যাক্সিতে দিঘা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। রবিবার বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় নন্দকুমারের খঞ্চি বাজারের কাছে সড়কের ধারে তাঁরা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়েছিলেন। ট্যাক্সি থেকে কয়েক জন নেমেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন চালক সুব্রত দাস (৪০)। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায়। তিনি নেমে ট্যাক্সির পিছনের দিকে দাঁড়িয়েছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ট্যাক্সিটি সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ওই একই লেনে হলদিয়া থেকে মেচেদাগামী চুনাপাথর বোঝাই এক লরি আসছিল। সেটিকে পুলিশের একটি গাড়ি ধাওয়া করছিল বলে অভিযোগ। খঞ্চি বাজারের কাছে পুলিশের গাড়িটি লরির সামনে চলে গিয়ে সেটিকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশকে এড়াতে লরিটি হঠাৎ সড়কের বাঁদিক ঘেঁষে পালাতে যায়। সেই সময়েই দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সিটির পিছনে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। ট্যাক্সির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকায় লরির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান ট্যাক্সিচালক চালক সুব্রতবাবু। ধাক্কার চোটে ট্যাক্সিটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তবে গাড়ির আরোহীরা কিছুটা দূরে থাকায় বেঁচে গিয়েছেন। দুর্ঘটনার পরেই লরিটি পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে তমলুকের কাছে লরিটি আটক করে পুলিশ।
দুর্ঘটনার পর বাসিন্দারা লরি আটকে পুলিশের তোলাবাজির জন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলে মৃতদেহ আটকে অবরোধ শুরু করেন। খবর পেয়ে নন্দকুমার থানার ওসি বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। অবরোধ হটাতে নামে র্যাফ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ আলোচনার আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অবোধ ওঠে।