দিনমজুর থেকে ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছিলেন ঘুরণ

ওখানে কোনও বাজি কারখানা চলত না। ধিতপুর গ্রামে ঘুরণ সিংহের বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণের পরে এমনই দাবি করেছিল পুলিশ। খোদ জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর জানিয়েছিলেন, রাবণ পোড়ার অনুষ্ঠানের জন্য ওই বাড়িতে বাজি মজুত ছিল। সোমবার ঘুরণের বড়বৌদি মল্লিকা কার্যত স্বীকার করে নিলেন, তাঁর মেজ দেওর বাজির কারখানা চালাতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রোহিণী শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৮
Share:

অবাক-চোখে: বিস্ফোরণস্থলে ছেলে কোলে ঘুরণের বৌদি। নিজস্ব চিত্র

ওখানে কোনও বাজি কারখানা চলত না। ধিতপুর গ্রামে ঘুরণ সিংহের বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণের পরে এমনই দাবি করেছিল পুলিশ। খোদ জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর জানিয়েছিলেন, রাবণ পোড়ার অনুষ্ঠানের জন্য ওই বাড়িতে বাজি মজুত ছিল। সোমবার ঘুরণের বড়বৌদি মল্লিকা কার্যত স্বীকার করে নিলেন, তাঁর মেজ দেওর বাজির কারখানা চালাতেন।

Advertisement

এ দিন মল্লিকা বলেন, ‘‘এই ব্যবসা যে বেআইনি সেটা আমরা বুঝতাম না। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন চকোলেট বোম, তুবড়ি, রংমশাল কিনতে আসতো। বিয়ে বাড়ি ও পুজোর মরসুমে প্রচুর বাজির অর্ডার থাকত।” স্থানীয়েরাও বলছেন একই কথা। গ্রামবাসীদের একাংশ জানালেন, তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ঘুরণ গত সাত-আট বছর ধরে বাড়িতে বেআইনি বাজির কারখানা চালাচ্ছিলেন। ঘুরণের এক প্রতিবেশীর বক্তব্য, রাত বারোটার পরে লরিতে করে বাজি তৈরির মালমশলা আসত। কেউ কখনও প্রতিবাদ করেননি? গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, ঘুরণ নাকি পুলিশ দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এ দিন পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ রবিবার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা ঘুরণের ও তাঁর স্ত্রী নমিতা। ঘুরণের মা কুনি সিংহ জানালেন, তাঁর বড় ছেলে অতুল ও ছোট ছেলে বীরেন পুজোয় ঢাক বাজাতে নিউ জলপাইগুড়ি গিয়েছেন। মেজ ছেলে ঘুরণ সস্ত্রীক বাইরে আছেন। কী ভাবে আগুন লাগে? মল্লিকার কথায়, ‘‘রবিবার ঘুরণ আর নমিতা এবং আরও তিনজন কর্মী বাজি বাঁধছিল। আমি কিছু বাজিতে পলতে লাগাচ্ছিলাম। ছেলেকে খেতে দেওয়ার জন্য বেরিয়ে আসি। পরে বিকট আওয়াজ পাই। দেখি বাড়িটা দাউদাউ করে জ্বলছে। প্রবল শব্দে ছিটকে পড়ছে বারুদ।”

Advertisement

ধিতপুর গ্রামের এক প্রান্তে ঘুরণদের মাটির বাড়ি। তিনভাই তিনটি অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে আলাদা থাকেন। ঘুরণদের বা়ড়ির উঠোনে একটি লম্বা মাটির বাড়িতে চলত বাজির কারখানা। ওই বাড়িটি খড়ের চালের। ঘরে খাট ও কিছু আবসাবপত্রও ছিল। এ দিন ঘুরণের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন রয়েছেন। পোড়া বাড়িটির চারপাশে নীল রঙের ফিতে দিয়ে ঘেরা।

পড়শিরা জানালেন, দিনমজুর থেকে বাজি ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পর ঘুরণের অবস্থা ফিরেছিল। কিনেছিলেন মোটরবাইকও। তবে আপাতত গ্রামের বাইরেই কাটছে দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন