ক্ষতিগ্রস্ত বাইক। নিজস্ব চিত্র
মাস দেড়েক আগে মার্চ মাসের গোড়ায় রাতের অন্ধকারে ঝাড়গ্রাম শহরে ঢুকে পড়েছিল দলছুট একটি হাতি। শহরের তিনটি ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি বাড়ির পাঁচিলও পড়েছিল হাতির রোষের মুখে। শেষে বন দফতর, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মিলিত চেষ্টায় হাতিটিকে জঙ্গলে ফেরানো গিয়েছিল। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু’পা এগোতেই যে হাতির আক্রমণের মুখে পড়বেন, ভাবতে পারেননি ভালুকখুলিয়ার বাসিন্দা বছর তেইশের শঙ্কু গিরি। শেষমেশ কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচেন যুবক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টির জন্য কাজে যেতে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল পেশায় রেস্তোরাঁর ওয়েটার শঙ্কুর। তাই বৃষ্টি থামতেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তারপর শুধু সামনে থেকে হাতি দেখাই নয়, সাধের বাইকটিকেও চুরমার হয়ে যেতে দেখেছেন শঙ্কু। বন দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, পড়িহাটি রেঞ্জের শঙ্খহার বিটের জঙ্গল থেকে দলমার পালের একটি হাতি কোনওভাবে ঝাড়গ্রাম শহরের ভালুকখুলিয়া এলাকায় ঢুকে পড়েছিল। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি— একটি নয়, বরং দু’টি হাতি ঢুকেছিল। হাতি দু’টি আশ্রয় নেয় ভালুকখুলিয়া এলাকার ঢালাই রাস্তার ধারে সেগুন গাছের বাগানে। সেই সময়ই বাইকে চড়ে যাচ্ছিলেন শঙ্কু। তাঁর কথায়, ‘‘চোখের সামনে অত বড় দাঁতাল হাতিকে দেখে ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতিটি ডান পা দিয়ে বাইকের হেডলাইটের গুঁতো দেয়। ফলে চুরমার হয়ে যায় হেডলাইট।’’ তারপর কোনও রকমে কিছু দূরের স্থানীয় ক্লাবে আশ্রয় নেন তিনি।
ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরও আতঙ্কের রেশ কাটছে না শঙ্কুর। মাস দেড়েক আগে বিয়ে করেছেন। অভাবের সংসার। শঙ্কু বলেন, ‘‘বাবা মাছ ফেরির টাকা জমিয়ে বাইকটি কিনে দিয়েছিলেন। হাতির হামলায় বাইকটির শোচনীয় অবস্থা হয়েছে।’’ হাতি ঢুকে পড়ার খবর জানাজানি হতেই বাসিন্দারা হাতি তাড়াতে শুরু করেন। তাড়া খেয়ে একটি হাতি বেদকুন্দ্রির দিকে, এবং অন্যটি ভালুকখুলিয়ার ফুটবল মাঠের দিকে চলে যায়। মাঠের ফুটবল পোস্টও ভেঙে দেয় হাতিটি। এরপর বন দফতরের নির্মীয়মান ইকো-পার্ক চত্বরে ঢুকে পড়ে হাতিটি। বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে হাতিটি শহরের জামদা এলাকার দিকে চলে যায়। তারপর রাতের দিকে হাতিটি শঙ্খহারের জঙ্গলে চলে যায়।
এর আগেও একাধিকবার শহরে হাতি ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের কথায়, ‘‘এভাবে লোকালয় হাতি ঢুকে পড়লে তো চিন্তার বিষয়! খাবারের সন্ধানেজঙ্গল লাগোয়া গ্রামেগঞ্জে হামেশাই ঢুকে পড়ে বুনো হাতি, আবার কখনও জনবসতি এলাকায় হামলা চালায়। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলাইচ্চি বলেন, ‘‘একটি হাতি ঢুকেছিল। বনকর্মীরা হাতিটিকে তাড়া করে জঙ্গলের দিকে পাঠিয়ে দেন। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যাঁর বাইক ভেঙেছে, তিনি আবেদন করলে খতিয়ে দেখে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’