ধান কিনছে সরকার, চাষি জানে তো!

চাষিদের পাশে দাঁড়াতে সহায়ক মূল্যে ধান কিনছে সরকার। জেলায় কি ধানক্রয়কেন্দ্র পর্যাপ্ত? সমবায় সমিতিগুলির ভূমিকা কেমন। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রশাসন? চাষিদের অভিযোগ গতি নেই ধান কেনার প্রক্রিয়ায়। কী বলছেন আধিকারিকেরা। এখনও কি ফড়দের দাপট আছে? প্রশাসনের তরফে প্রচার কি সন্তোষজনক? খোঁজখবর নিল আনন্দবাজার।প্রশাসনের দাবি, প্রচারের অভাব নেই। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। সরকারি দফতরগুলিতে ব্যানার, হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। বিলি হয়েছে লিফলেট। গ্রামেগঞ্জে মাইকিং হয়েছে। প্রশাসন এ-ও দাবি করেছে, খাদ্য দফতর, ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত- সহ সংশ্লিষ্ট একযোগে প্রচার চালাচ্ছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২০
Share:

ধান কিনতে সরকারের দায়সারা প্রচার। নিজস্ব চিত্র

শুধুই কি নজরদারির ঘাটতি! ধান কেনার সরকারি উদ্যোগে প্রচার কি পর্যাপ্ত?

Advertisement

প্রশাসনের দাবি, প্রচারের অভাব নেই। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। সরকারি দফতরগুলিতে ব্যানার, হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। বিলি হয়েছে লিফলেট। গ্রামেগঞ্জে মাইকিং হয়েছে। প্রশাসন এ-ও দাবি করেছে, খাদ্য দফতর, ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত- সহ সংশ্লিষ্ট একযোগে প্রচার চালাচ্ছে।

জেলা প্রশাসন যাই দাবি করুক গ্রামের মানুষের একাংশের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, সরকারি শিবিরে বিক্রির জন্য ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি প্রচার তাঁদের কানে তেমন আসেনি। সব গ্রামে লিফলেট বিলি হয়নি। পঞ্চায়েত তরফেও পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করছে না। ধান ব্যবসায়ীরা ধান কেনা থেকে বিরত থাকার পর অনেকেই শিবিরের কথা জানতে পারেন। গড়বেতার আমলাগোড়ার এক চাষি বললেন,

Advertisement

অভিযোগ, প্রচারে সরকারি ঘাটতির সুযোগে ফাঁকা ময়দান দাপিয়ে বেড়াচ্ছ ফড়ে-ব্যবসায়ীরা। ফড়েরাই ত্রাতা হয়ে বোঝাচ্ছেন, কুইন্টালে পাঁচ কিলোগ্রাম করে কম নেবে সরকার। দশ কুইন্টাল ধান বেচলে পঞ্চাশ কিলোগ্রাম কমবে। এরপর জুড়বে পরিশ্রম, ঝক্কি। সঙ্গে ধানক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত ধান বয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচ। তারপর চেক জমা দিতে ছুটতে হবে ব্যাঙ্কে। কবে টাকা ঢুকছে সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হবে। ব্যাঙ্কে গিয়ে লম্বা লাইন দিতে তুলতে হবে টাকা। অভিযোগ, ফড়েদের এমন পরামর্শ সহজেই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে চাষিদের একাংশের। নজরদারির অভাবে চাষির ধান ঢুকছে ব্যবসায়ীর গোলায়। সুযোগ বুঝে একসময় সেই ধান বস্তাবন্দি গাড়ি ঢুকছে শিবির গুলোতে। এ ক্ষেত্রে ফড়েরা ব্যবহার করছেন সেই চাষিদেরই। নিমেষেই কুইন্টাল প্রতি তিনশো সাড়ে তিনশো টাকা লাভ করে নিচ্ছেন ফড়েরা। ঘাটালের এক ধান ব্যবসায়ীর কটাক্ষ, “লাইনের লোক সেই লাইনটা ভালই বোঝেন। আমরা তো মুনাফার জন্য ব্যবসা করছি।’’

জেলা খাদ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘খবর কাগজে যা লেখালিখি হচ্ছে তাতেই তো প্রচার হয়ে যাচ্ছে! কাগজের সমোলোচনা আগে পৌঁছয় গ্রামের ঘরে-ঘরে।”

তবে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার বিষয়টি নিয়ে সচেতন চাষির সংখ্যাও জেলা জুড়ে কম নয়। চন্দ্রকোনার শ্রীনগরের চাষি রঞ্জিৎ সর্দার বলছিলেন, ‘‘সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রচার হয়েছে। আমরা সরকারি লিফলেট পেয়েছি। এমনকী, আমাদের গ্রামে মাইকিংও হয়েছে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্লকের সদর শহরের কাছাকাছি ধানক্রয় কেন্দ্র গুলিতে চাষিদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছিল অক্টোবর মাস থেকে। নভেম্বর মাস থেকে ধান কেনা শুরু করেছিল সরকার। গড়ে প্রতি ব্লকে কয়েক হাজার চাষির বসবাস। কিন্তু ধানক্রয় কেন্দ্রগুলিতে নাম নথিভুক্তের তালিকায় তার সিকি ভাগ চাষির নাম এখনও ওঠেনি। খাদ্য দফতরের তথ্য বলছে, সর্বোচ্চ নাম নথিভুক্তির সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। তবে বেশিরভাগ ব্লকে নাম নথিভুক্তের সংখ্যা গড়ে দেড় থেকে দু’হাজার।

প্রশাসনের দাবি, প্রচার পর্যাপ্ত। কিন্তু তথ্য বলছে, ধান কেনায় গতি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন