কারও এখনও ছবিই তোলা হয়নি, কারও ছবি তোলা হলেও এখনও হাতে পাননি কার্ড। আধারে ‘আঁধার’ না কাটায় বিপাকে মেদিনীপুর শহরের বহু মানুষ।
রাজ্য জুড়ে আধার কার্ড তৈরির সময় মেদিনীপুর শহরেও সেই কর্মসূচি হয়েছিল। যদিও সেই সময় অনেকেই কার্ড তৈরি করতে পারেননি। পরে পুরসভায় ফের আধার কার্ড তৈরির জন্য ছবি তোলা শুরু হয়। সেই কর্মসূচি মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন আরও কোনও শিবির হয়নি। আধারের শিবির ফের শুরু করতে অনেকে পুরসভায় আবেদন জানান।
গত অগস্ট মাসে শহরের ২ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আধার কার্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। যদিও ২৫টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট মেদিনীপুর পুরসভার বাকি ওয়ার্ডে তখন শিবির হয়নি। গত মঙ্গলবার থেকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আধারের শিবির শুরু হয়েছে। চলবে রবিবার পর্যন্ত। এরপর পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ড ভিত্তিক এই শিবির চলবে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। এই শিবির শেষ হবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর ফের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সাত দিন ধরে কার্ড তৈরির কাজ চলবে পুরসভায়।
ব্যাঙ্কের নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে আধার কার্ড দরকার। পড়ুয়াদের স্কলারশিপের টাকা, এলপিজি গ্যাসে ভর্তুকি পেতেও এই কার্ড প্রয়োজন। আধার কার্ড না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেকে। প্রথমবার যখন আধার কার্ড হচ্ছিল তখন অনেক পরে জানতে পারেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শরৎপল্লির বাসিন্দা শান্তনু সিংহ। সেই সময় বাড়ির অন্য সদস্যরাও আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। পেশায় শিক্ষক শান্তনুবাবু একাই কার্ড করার জন্য ছবি তোলেন। কিন্তু এখনও কার্ড মেলেনি। শান্তনুবাবু বলেন, “নিজের কার্ডও আবার করতে হবে। বাকিদের কার্ড করাতে হবে। মায়ের নামে গ্যাস। আধার কার্ড না থাকায় ভর্তুকিও মিলছে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কে, স্কুলের নথিতেও আধার কার্ড দিতে পারিনি। কবে কার্ড হবে খোঁজ নিতে গিয়ে সঠিক দিনক্ষণও জানতে পারছি না। আগে থেকে জানতে না পারলে তো বিপদ। আবার যদি না সুযোগ না পাই!”
মেদিনীপুরের উপ পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের আশ্বাস, “প্রতিটি ওয়ার্ডেই নির্দিষ্ট সময়ে আধার কার্ড তৈরির কাজ হবে। কোন ওয়ার্ডে কোন সময় শিবির হবে, তা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে জানিয়ে দেবেন।” যদিও শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আধারের শিবির শুরু হলেও প্রচারের অভাবে অনেকেই তা জানতে পারছেন না। যদিও পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, শিবিরের দিনক্ষণ নিয়ে প্রচারের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের। প্রশ্ন হল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর যে সময় প্রচার করবেন সেই সময় তো অনেকেই বাইরেও থাকতে পারেন, তাঁদের কী হবে? আগে থেকে প্রতিটি এলাকায় প্রচার না চালালে সকলে জানবেন কী করে।
শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, শিবিরের বিষয়ে শহরের প্রতিটি এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে না কেন? যদিও পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে তার সদুত্তর মেলেনি। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সমস্ত ওয়ার্ডে শিবির শেষ হওয়ার পরে পুরসভাতেও সাত দিন আধার তৈরির কাজ শুরু হবে। যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর ওয়ার্ডের শিবিরে আধার কার্ড তৈরি করতে না পারেন, পুরসভায় তাঁদের সেই সুযোগ মিলবে।