বাসন কিনে ফেরা। নিজস্ব চিত্র
কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন গোটা জিরে-দারচিনি-এলাচ-লবঙ্গ। কেউ কিনছেন অ্যালুমিনিয়ামের বাসন। কম্বল, রকমারি মিষ্টি, বিস্কুট, প্রসাধন সামগ্রীর খদ্দেরও নেহাত কম নয়।
উরস উৎসবে যোগ দিতে বিশেষ ট্রেনে বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজন প্রতিবারের মতো এ বারও মেদিনীপুর থেকে প্রচুর জিনিস কিনছেন। তুলনামূলক ভাবে কম দাম এবং ভাল মানের জিনিস পাওয়া যায় বলেই চলে এই কেনাকাটা। বাংলাদেশের রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দের বাসিন্দা, পেশায় চিকিৎসক নুরুল ইসলাম বলছিলেন, ‘‘১৯৮৬ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই উরসের সময় মেদিনীপুরে আসি। নানা জিনিস নিয়ে যাই। এ বার আট কিলো ক্ষীরের গজা, ৪টি কম্বল, ও ৫ কিলো গোটা জিরে কিনেছি। বাংলাদেশে গোটা জিরের দাম প্রতি কিলো ৩৫০-৪০০ টাকা। সেখানে এখানে পেলাম ২১০ টাকা কিলোয়, জিনিসও ভাল।’’ বাংলাদেশের চড়নারায়ণের বাসিন্দা আক্রম হোসেনের কথায়, ‘‘প্রতিবারই অ্যালুমিনিয়ামের বাসন, প্রেশার কুকার, মাদুর কিনে নিয়ে যাই। এ বার দু’টো বড় হাঁড়িও কিনেছি।’’
রাজবাড়ির স্বরুপাচকের আবু সায়িদ ২টি কম্বল নিজের জন্য কেনার পাশাপাশি পরিচিতদের জন্যও ৩টি কম্বল কিনেছেন। তিনিও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ভাল কম্বল দু’হাজারের কমে মেলে না। এখানে ১৪০০ টাকায় পেলাম। নানা ধরনের সাবান, তেল, ক্রিম, বিস্কুট, চকোলেটও নিয়েছি।’’ বাংলাদেশের বড়বাড়ির বাসিন্দা শেখ সাবাত মেদিনীপুর আসার সময় সাড়ে ছ’হাজার বাংলাদেশি টাকা নিয়ে এসেছিলেন। গেদে স্টেশনে তা বদলে ভারতীয় টাকা নিয়েছেন। সাবাত বলছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের ১০০ টাকায় ভারতের ৭৮ টাকা পেয়েছি। বেশিরভাগ টাকারই কেনাকাটা করে ফেলেছি।’’
প্রতি বছর ৩রা ফাল্গুন মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত হয় উরস উৎসব। সুফি সাধকের মৃত্যু বার্ষিকীতে দেশের নানা প্রান্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই সময়টায় শহরে আসেন। বাংলাদেশ থেকে আসে বিশেষ ট্রেন। এ বার সেই ট্রেনে ২১৩৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক মেদিনীপুরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার শহরে পৌঁছেই মির্জা মহল্লার জোড়া মসজিদে উরস উৎসবে যোগ দিয়েছেন তাঁরা। তারপর বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দিনভর কেনাকাটা চলেছে শহরের বড়বাজার, সাহাভড়ং বাজার, স্কুলবাজারের বিভিন্ন দোকানে। এমনিতে মেদিনীপুর শহরের বেশিরভাগ দোকান বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। কিন্তু বাংলাদেশি ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে এই সপ্তাহে বৃহস্পতিবার দোকান খোলা ছিল। বেচাকেনাও হয়েছে জমিয়ে।
নিমতলাচকের ব্যবসায়ী আকাশ অগ্রবাল বলেন, ‘‘এই সময়টা বাংলাদেশিদের জন্য গোটা জিরে, আমসত্ত, দারচিনি, লবঙ্গ, মোরোব্বা বেশি করে মজুত করে রাখি। এ সবের খুব চাহিদা।’’ ছোটবাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী অসিত মালের কথায়, ‘‘বাংলাদেশিরা কয়েক রকমের শুকনো মিষ্টি খুব পচ্ছন্দ করেন। সেই মতো ১২ কুইন্ট্যাল ক্ষীরের গজা, ২ কুইন্ট্যাল মিহিদানা ও দেড় কুইন্ট্যাল খাস্তা গজা বানিয়েছি। সবই বিক্রি হয়ে যাবে।’’
মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মলয় রায় জানালেন, বৃহস্পতি-শুক্র দু’দিনে শহরের স্টেশনারি, মিষ্টি, বাসন ও জামাকাপড়ে দোকানে প্রচুর কেনাকাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কটা প্রায় চার কোটি টাকা।
উরস উৎসব শেষে শুক্রবার রাতেই ট্রেনটি মেদিনীপুর স্টেশন থেকে রওনা হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। ফের বছরভরের অপেক্ষা।