নামী চিকিত্সকদের ধরে রাখতেই রোগীদের থেকে মোটা টাকা ফি আদায় করছে জেলার একাংশ নার্সিংহোম— এমনটাই ধারণা পশ্চিম মেদিনীপুরের স্বাস্থ্য কর্তাদের।
মেদিনীপুর শহরের একটি নার্সিংহোমে সাধারণ প্রসবের পরেও ৩১,৪৯৫ টাকার বিলের অঙ্ক দেখে এই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। ওই বিল অনুযায়ী সার্জেন এবং সহকারীর ফি বাবদ ১২ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছিল। অথচ গত বৃহস্পতিবার রাতে স্বাভাবিক প্রসবে যমজ কন্যার জন্ম দেন দাঁতনের পুরুন্দা গ্রামের শেফালি মাইতি। একটি সন্তানের প্রসব আবার নার্সিংহোমে আসার আগেই গাড়িতে হয়ে যায়। তাও কেন সার্জেন ও সহকারীর ফি বাবদ অতগুলো টানা নেওয়া হল, সেটাই ভাবাচ্ছে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের।
রবীন্দ্রনগরের ‘মিদনাপুর নার্সিংহোম’ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছেন প্রসূতির স্বামী রাধামাধব মাইতি। শেফালিদেবী ও তাঁর দুই মেয়ে এখন মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন।
যদিও অভিযুক্ত ওই নার্সিংহোমের মালিক দেবলরঞ্জন দত্ত বলেন, “নির্দিষ্ট রেট-চার্ট অনুযায়ী আমরা বিল নিই। আর চিকিত্সকের ফি-তে আমাদের কোনও হাত নেই। ওই টাকা চিকিত্সকেই দেওয়া হয়।’’ রাধামাধববাবুদের বিলে সার্জেন চার্জ থেকে ২ হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, এ ক্ষেত্রে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রেই চিকিত্সকদের ধরে রাখতে নার্সিংহোমগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। নামী বিশেষজ্ঞ হলে তো কথাই নেই। আর তাঁদের খরচটা সাধারণ রোগীর পকেট কেটে তুলে নিচ্ছে নার্সিংহোমগুলি। রোগীর পরিজনেদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বাড়ানো হচ্ছে বিলের অঙ্ক। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা জানালেন, মেদিনীপুর শহরের কিছু চিকিত্সক নার্সিংহোমে সাধারণ প্রসবে ১৬ হাজার টাকা ফি নেন বলেও অভিযোগ জমা পড়েছে। তার সঙ্গে নার্সিংহোমের নিজস্ব খরচ মেটাতে গিয়ে রোগীর পরিজনের ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির দশা হয়।
শেফালিদেবী ও তাঁর দিনমজুর স্বামীর অভিজ্ঞতাও তেমনই। নির্দিষ্ট সময়ের মাস দেড়েক আগেই শেফালিদেবীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। স্ত্রীকে প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার নার্সিংহোমে নিয়ে যান রাধামাধববাবু। সেখানকার চিকিত্সক ঝুঁকি নেননি। তখন ভাড়ার গাড়িতে শেফালিদেবীকে মেদিনীপুরের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর মণ্ডলের চেম্বারে নিয়ে আসা হয়। রাধামাধববাবুর দাবি, দীপঙ্করবাবু অবিলম্বে শেফালিদেবীকে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে বলেন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টা নাগাদ ভাড়ার গাড়িতেই প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শেফালিদেবী। দিশেহারা রাধামাধববাবু তখন হাতের কাছে ‘মিদনাপুর নার্সিংহোম’-এ স্ত্রীকে নিয়ে যান। ‘কল’ পেয়ে সেখানে আসেন চিকিত্সক দীপঙ্করবাবু। দ্বিতীয় কন্যাসন্তানেরও স্বাভাবিক প্রসব হয়। মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি চিকিৎসক দীপঙ্করবাবুর সঙ্গে। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা।