হোমেই অন্নপ্রাশন, পায়েস খাওয়ালেন জেলাশাসক 

অন্নপ্রাশন ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই হোমে ছিল সাজো সাজো রব। রঙিন বেলুন আর কাগজের ফুল দিয়ে হোম চত্বর সাজানো হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০২:০৪
Share:

তিন শিশুকন্যার সঙ্গে জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র

একসঙ্গে তিন শিশুকন্যার অন্নপ্রাশন হল মঙ্গলবার মেদিনীপুরের সরকারি হোমে। এখানে এসে জেলাশাসক রশ্মি কমল নিজের হাতে একে একে তিনজনকে পায়েস খাইয়ে দেন। হোমে তখন উলুধ্বনির রোল। পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘আজকের দিনে হোমে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে। ওদের অভিভাবক হিসেবে আমরাই সরকারি উদ্যোগে সব আয়োজন করেছি।’’

Advertisement

অন্নপ্রাশন ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই হোমে ছিল সাজো সাজো রব। রঙিন বেলুন আর কাগজের ফুল দিয়ে হোম চত্বর সাজানো হয়েছিল। তিনটে শিশুকে চন্দনের ফোঁটা ও রজনীগন্ধার মালায় সাজানো হয়। তাদের নতুন পোশাক পরানো হয়। পাতে ছিল মিষ্টি, পায়েস। উল্লসিত জেলাশাসককে বলতেও শোনা যায়, ‘‘দেখুন, দেখুন, ওদের কেমন রাজকন্যের মতো দেখাচ্ছে।’’

হোম সূত্রে খবর, তিনটে শিশুকন্যার নাম অঙ্কিতা, শুভেচ্ছা এবং অমৃতা। এরমধ্যে অঙ্কিতা এবং শুভেচ্ছার বয়স আট মাস। এরা মেদিনীপুরের শিশু দত্তক কেন্দ্রে রয়েছে। অঙ্কিতা খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে এসেছে। শুভেচ্ছা পুরুলিয়া জেলা হাসপাতাল থেকে এসেছে। অমৃতার জন্ম মেদিনীপুরেই। মাস দশেক আগে এক মামলার সূত্রে তাঁর মা অঞ্জলি কিস্কুর ঠাঁই হয় এই হোমে। তখন তিনি গর্ভবতী। পরে তাঁর কন্যা সন্তান হয়। এখন অমৃতার বয়স ন’মাস। অঙ্কিতা, শুভেচ্ছার মা-বাবার খোঁজ নেই। মেদিনীপুরের রাঙামাটিতে রয়েছে এই সরকারি হোম। নাম 'বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন।' হোমের সুপার সুদীপ্তা চক্রবর্তী দেব বলছিলেন, ‘‘তিনটে মেয়ের জন্য এই আয়োজন করতে পেরে আমাদেরও খুব ভাল লাগছে।’’

Advertisement

মঙ্গলবার হোমে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস প্রমুখ। গিরীশবাবুর কথায়, ‘‘এমন অনুষ্ঠানের কথা শুনে না এসে পারলাম না। এসে বড় ভাল লাগল।’’ প্রশাসনিক আধিকারিকদের অনেকেই অন্নপ্রাশনের উপহার হিসেবে তিনটে মেয়ের জন্য নতুন পোশাক এনেছিলেন। জেলাশাসকও নতুন পোশাক দিয়েছেন ওই তিনটে শিশুকন্যাকে। অন্নপ্রাশন বলে কথা! আবাসিকদের জন্য এ দিন এলাহি খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্তও ছিল। কেমন? মেনুতে ছিল পাঁচ রকম ভাজা, ভাত, ডাল, আলু- পটলের তরকারি, মাংস, চাটনি। শেষ পাতে পায়েস, মিষ্টি।

অঙ্কিতা, শুভেচ্ছা শিশু দত্তক কেন্দ্রে রয়েছে। অমৃতার মা এখনও হোমেই রয়েছেন। তিনি এ দিন ছিলেনও। অবশ্য যে কোনও দিন তো এরা হোম ছেড়ে অন্য কারও ঘরে চলে যাবে? প্রশ্ন শুনে আনন্দের দিনেও চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছিল হোমের এক মহিলা আধিকারিকের। তাঁর কথায়, ‘‘বলতে পারেন, জন্মের কিছু দিন পর থেকে আমরাই তো ওদের কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি এখানে। সন্তান স্নেহে দেখেছি। ওরা চলে গেলে মনটা সত্যিই খারাপ হয়ে যাবে।’’

প্রশাসনিক আধিকারিকেরা যখন অঙ্কিতাদের ধান- দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করছিলেন, তখন তাদের হাত চলে যাচ্ছিল ফুলের গয়নার দিকে। যে ফুলের গয়না তাদের হাতে-পায়ে পরিয়ে সাজানো হয়েছিল। জেলাশাসক বলছিলেন, ‘‘বড় হয়ে ওরা যখন শুনবে যে এ ভাবে হোমে অন্নপ্রাশন হয়েছিল, তখন ওরাও নিশ্চয়ই খুশি হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন