মোবাইলের টাওয়ার নিয়ে জালিয়াতি

থানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগও। যদিও এখনও এই চক্রের সঙ্গে জড়়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

ফোন করে এটিএম কার্ডের নম্বর জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনার পর জেলা জুড়ে নতুন আর এক জালিয়াতির ঘটনা সামনে এল। অভিযোগ, মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে মোবাইল টাওয়ার বসানোর নামে চলছে প্রতারণা। জালিয়াতির নতুন ফাঁদে ইতিমধ্যেই প্রতারিত হয়েছেন অনেকে। থানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগও। যদিও এখনও এই চক্রের সঙ্গে জড়়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

Advertisement

কী ভাবে চলছে এই প্রতারণা?

সম্প্রতি জেলার অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন নামী মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার নামে একটি করে কল আসছে। তাতে নিজেকে ওই মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার কর্মী পরিচয় দিয়ে বলা হচ্ছে দশ ফুট বাই দশ ফুট জায়গা বা বাড়ির ছাদে ‘ফোর জি’ টাওয়ার বসানোর অনুমতি দিলে সিকিউরিটি বাবদ মিলবে ১৩ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও জায়গার ভাড়া বাবদ দেওয়া হবে মাসে ২৬ হাজার টাকা। টাওয়ার পরিচালনার জন্য জায়গা বা ঘরের মালিককে দেওয়া হবে মাসিক আরও ১৫ হাজার টাকা। প্রাথমিক ভাবে জায়গা বা ঘরের মালিক রাজি হলেই ওই ভুয়ো কর্মীরা নামী মোবাইল সংস্থার লোগো লাগানো বিভিন্ন জাল কাগজপত্র নিয়ে এসে ভুয়ো চুক্তিপত্রে সই করিয়ে ‘নো অবজেকশন’ রিপোর্ট ও নানা অনুমতির অছিলায় জায়গার মালিকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য ভুয়ো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ‘সিকিউরিটি মানি’র বিরাট অঙ্কের ভুয়ো ডিমান্ড ড্রাফট অনলাইনের মাধ্যমে ওই জায়গার বা ঘরের মালিকের নামে দেখানো হচ্ছে। ওই ভুয়ো কর্মীরা জানাচ্ছেন, আগাম ৪ বা ৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ওই ‘সিকিউরিটি মনি’ সরাসরি চলে যাবে জায়গা বা ঘর মালিকের অ্যাকাউন্টে। এ ভাবে জায়গার বা ঘরের মালিকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ওই জালিয়াতরা নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

Advertisement

সম্প্রতি পাঁশকুড়ার মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রাজশহর গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ মান্না এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে খুইয়েছেন ৪ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। এই মর্মে পাঁশকুড়া থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি। দিলীপের দাবি, ‘‘ওই ভুয়ো কর্মীরা যে ভাবে আমার জায়গায় টাওয়ার বসানো নিয়ে কথা বলেছিল তাতে একবারও ভুয়ো বলে মনে হয়নি। কিন্তু এত টাকা দেওয়ার পর ওদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। থানায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।’’ গ্রামেরই ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ সামন্ত বলেন, ‘‘একই অনুরোধ জানিয়ে আমার কাছেও ফোন এসেছিল। কিন্তু ওদের কথায় অসঙ্গতি মনে হওয়ায় আমি আর ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। ওদের ফোনও ধরিনি।’’ মোবাইল টাওয়ার বসানোর প্রলোভনে পা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন দিলীপের মতো আরও অনেকে। কিন্তু এখনও টাকা ফেরত বা টাওয়ার বসবে এই আশায় অনেকেই থানায় অভিযোগ জানাননি।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা টেলি টাওয়ার ওয়ার্কার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, ‘‘আমার কাছেও এ ধরনের ফোন এসেছিল। এ ভাবে টাওয়ার বসানোর জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থাগুলি কাউকে ফোন করে না। তাই এই ধরনের প্রলোভনের ফাঁদে কেউ যেন পা না দেন।’’

তমলুক মহকুমার সিআই বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রতারণার ব্যাপারে দু’একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। শহরবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে, এই ধরনের কোনও ফোন পেলেই থানায় জানাতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন