অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থীর জামানত জব্দ রেলশহরে

৩৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন ১৬৬ জন। তার মধ্যে ৮৫ জনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে! পুরভোটে এই ছবি খড়্গপুরের। কে নেই জামানত জব্দের দলে! যে ৮৫ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তার মধ্যে বামেদের ২১ জন, বিজেপির ১৬ জন, কংগ্রেসের ১৪ জন, তৃণমূলের ৯ জন রয়েছেন। বাকি ২৫ জন নির্দল প্রার্থী।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০২:০৩
Share:

৩৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন ১৬৬ জন। তার মধ্যে ৮৫ জনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে! পুরভোটে এই ছবি খড়্গপুরের। কে নেই জামানত জব্দের দলে! যে ৮৫ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তার মধ্যে বামেদের ২১ জন, বিজেপির ১৬ জন, কংগ্রেসের ১৪ জন, তৃণমূলের ৯ জন রয়েছেন। বাকি ২৫ জন নির্দল প্রার্থী।

Advertisement

নিয়মানুযায়ী, মোট বৈধ ভোটের অন্তত ছ’ভাগের এক ভাগ না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই যে ভুরি ভুরি প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে তা মানছে সব দলই। নেতাদের মতে, সব এলাকায় সবার সমান শক্তি সমান নয়। ভোটের ফলে তারই প্রভাব পড়েছে। কিন্তু দলগুলির অন্দরের খবর, জামানত জব্দের গেরো দলে অস্বস্তি তৈরি করেছে। ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টি ওয়ার্ডে জামানত বাজেয়াপ্তের ব্যাপারটি যেন বুঝেও বুঝে উঠতে পারছেন না বাম-নেতৃত্ব। সিপিআইয়ের জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলছেন, “খড়্গপুরে তৃণমূল-বিরোধী ভোট হয়েছে। ফলাফল প্রাথমিক পর্যালোচনা করে যা বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে মানুষই ঠিক করে নিয়েছেন, তৃণমূলকে হারাতে কোন এলাকায় কাকে ভোট দেবেন। দেখে নিয়েছেন, বিরোধী প্রার্থী হিসেবে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি।” বিজেপিও ১৬টি ওয়ার্ডে জামানত খুইয়েছে। দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় মানছেন, “দলের সব প্রার্থীর সমান গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। আগামী দিনে প্রার্থী নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা আরও সতর্ক হব।”

১৪টি ওয়ার্ডে জামানত জব্দ হয়েছে কংগ্রেসের। শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসের বক্তব্য, “খড়্গপুরের সর্বত্র আমাদের সমান সাংগঠনিক শক্তি নেই। তাই কয়েকটি এলাকায় আমাদের খারাপ ফল হয়েছে।” স্বস্তিতে নেই শাসক দলও। একে তো পুরভোটের ফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠা মেলেনি। তার উপর ৯টি ওয়ার্ডে জামানত খোয়াতে হয়েছে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলছেন, “কোথাও ভুল- ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল কি না দেখছি!”

Advertisement

খড়্গপুরে এ বার কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছে ১১টি ওয়ার্ড। কংগ্রেসেরও প্রাপ্তি ১১টি। বামেরা পেয়েছে ৬টি এবং বিজেপির ঝুলিতে এসেছে ৭টি ওয়ার্ড। চতুর্মুখী লড়াইয়ের জটিল অঙ্কেই রেলশহর ত্রিশঙ্কু হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ফলপ্রকাশের পর সব দলের নেতৃত্বেরই উপলব্ধি, পরিবর্তিত পরিস্থিতির জেরে এর আগে ভোট আড়াআড়ি দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে, তবে এ ভাবে চার ভাগ হয়ে যায়নি।

জামানত জব্দ হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রদত্ত ৭,৩৫৬ ভোটের মধ্যে বিজেপির রিয়াসত আলি খান পেয়েছেন মাত্র ১৫৩ ভোট। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রদত্ত ৫,১০২ ভোটের মধ্যে কংগ্রেসের পুষ্পা দুবে ১৩৮, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪,১৭০ ভোটের মধ্যে বামের মধুলিকা শর্মা ১২০, কংগ্রেসের রমা কুমারী ৩৬, ১৬ নম্বরে ৩,৬৪১ ভোটের মধ্যে বামের সুস্মিতা পাত্র ১৮৯, ১৭ নম্বরে ৪,৩৩৯ ভোটের মধ্যে বিজেপির বি মুরলীধর রাও ২০৪, বামের এম ভাস্কর রাও ১০১, ১৮ নম্বরে ৫,৪১৬ ভোটের মধ্যে বামের এ কোণ্ডলা রাও ৮৩, কংগ্রেসের বি প্রভাকর রাও ৩১৩ ভোট পেয়েছেন। ২১ নম্বরে প্রদত্ত ৩,৮৮৪ ভোটের মধ্যে বামের ভি দিলীপ রাও মাত্র ১১০ ভোট পেয়েছেন। ২২ নম্বরে ৪,৪৯৬ ভোটের মধ্যে বামের বর্ষা রায়চৌধুরী ১৮৮, ৩০ নম্বরে ১,৪৫১ ভোটের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুমকো সরকার রায় ৪৭, ৬ নম্বরে ৪,২১৪ ভোটের মধ্যে তৃণমূলের সুখদেব সাহা ৪৫৬, ১৩ নম্বরে ৪,৩৬৪ ভোটের মধ্যে তৃণমূলের সি রামনা মূর্তি ২২৮ ভোট পেয়েছেন। রেলশহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে একমাত্র ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেই কোনও প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়নি। বাকি ৩৪টি ওয়ার্ডে কোনও না- কোনও প্রার্থী জামানত খুইয়েছেন।

পরিস্থিতি দেখে শাসক দলের এক নেতা বলছেন, “চতুর্মুখী লড়াইয়ে এ বার বেশ কয়েকটি আসনে মীমাংসা হয়তো অল্প ব্যবধানে হবে, এটা আমাদের জানা ছিল। কিন্তু ৯টি ওয়ার্ডে জামানতই বাজেয়াপ্ত হবে, এটা বুঝতে পারিনি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন