পরম্পরা বাঁচাতেই লড়াই ময়না-কাননের

পটশিল্পের হাত ধরেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান দাসপুরের গৌরী চিত্রকর। গত ২৫ মার্চ তিনি প্রয়াত হয়েছেন। মায়ের কাছে শেখা পটের ছবি ও গানের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন গৌরীদেবীর ছেলে ও মেয়েরা।

Advertisement

সৌমেশ্বর মণ্ডল

দাসপুর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫০
Share:

ময়না চিত্রকর ও কানন চিত্রকর।

পটশিল্পের হাত ধরেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান দাসপুরের গৌরী চিত্রকর। গত ২৫ মার্চ তিনি প্রয়াত হয়েছেন। মায়ের কাছে শেখা পটের ছবি ও গানের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন গৌরীদেবীর ছেলে ও মেয়েরা। গৌরীদেবীর ছেলে কানন চিত্রকর রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি নিয়ে দু’টি পটচিত্র এঁকেছে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের আবেদন জানিয়ে সেই পট রাজ্য কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প দফতরে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি। আর গৌরীদেবীর মেয়ে ময়না চিত্রকর পটের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন— কন্যাশ্রী, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন গাঁ-গঞ্জে। দু’জনেরই লক্ষ্য, মায়ের পরম্পরা বাঁচিয়ে রাখা।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের নির্ভয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন গৌরী চিত্রকর। তাঁর আঁকা পট ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিল। পটের পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছেন গৌরীদেবীর ছেলে ও মেয়ে। তাই এই শিল্প ওঁদের মজ্জাগত। পটের সূত্রে রোজগারও নেহাত মন্দ হয় না। বিভিন্ন মেলায় পটের চাহিদা যথেষ্ট। মিলেছে স্বীকৃতিও। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের কারুশিল্প প্রতিযোগিতায় নানা পুরস্কার পান এঁরা। গৌরীদেবীর মেয়ে ময়না জানালেন, মায়ের কাছেই পট আঁকার হাতেখড়ি। ২০০৪ সালে চেন্নাইতে সুনামি নিয়ে আঁকা পট বিক্রি করে এসেছেন। এর পর ২০০৭-এ সীতার কাহিনি ও গ্রামের ছবি নিয়ে আঁকা পট চেন্নাই থেকে প্রকাশিত বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে।

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাড়িতে এসে শাড়ি, চাদর, ওড়না, চুডিদার, পাঞ্জাবিতে পটের নানা ছবি আঁকিয়ে নিয়ে যান। পরম্পরা বজায় রাখার জন্য ময়না তাঁর দুই বৌমা, রহিমা ও ভবানীকেও তিনি পটশিল্পী করে তুলেছেন। ময়না বলছিলেন, ‘‘মা-ই আমাদের আদর্শ ছিল। মা-র পথ অনুসরণ করে চলেছি। পরের প্রজন্মকে তৈরি করছি।’’

Advertisement

পট বাঁচাতে লড়ছেন গৌরীদেবীর বড় ছেলে কাননবাবুও। কলকাত, দিল্লি-সহ দেশের নানা প্রান্তের মেলায় যান পটের পসরা নিয়ে গিয়েছেন। বিদেশেও গিয়েছে তাঁর পট। বছর কয়েক আগে হাসিমা টোনিকো নামে এক মহিলা এসে পট কিনে কিউবা নিয়ে গিয়েছেন। এখন কাননবাবুর লক্ষ্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য এ বারের পট দু’টি খুব যত্ন নিয়ে বানিয়েছি। আশা করি পট দু’টি বিচারের জন্য দিল্লি যাওয়ার সুযোগ পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন