দাবি আদায়ে জোট মুন্ডা সমাজে

মাতৃভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরেই প্রশাসনিক মহলে দরবার করে চলেছে মুন্ডাদের সর্বভারতীয় সংগঠনটি। ঝাড়গ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। তার ১৮ শতাংশ মুন্ডা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০০:৪৪
Share:

ঝাড়গ্রাম জেলার আটটি ব্লকে মুন্ডা পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়েছে। —ফাইল চিত্র।

আদিবাসী হয়েও সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অভিযোগ মুন্ডা সম্প্রদায়ের। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ বার ঝাড়গ্রাম জেলায় গ্রাম ভিত্তিক সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে মুন্ডাদের সামাজিক সংগঠন ‘সারা ভারত মুন্ডা সমাজ’। সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। দাবি জানানো হবে, মুন্ডাদের পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের।

Advertisement

মাতৃভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরেই প্রশাসনিক মহলে দরবার করে চলেছে মুন্ডাদের সর্বভারতীয় সংগঠনটি। ঝাড়গ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। তার ১৮ শতাংশ মুন্ডা। ঝাড়গ্রাম জেলার কমবেশি আটটি ব্লকে বাস করেন মুন্ডারা। গোপীবল্লভপুর, বেলিয়াবেড়া ও সাঁকরাইলে ওই জনবসতির বসতি সবচেয়ে বেশি।

সম্প্রতি রাঁচিতে অনুষ্ঠিত সারা ভারত মুন্ডা সমাজের সর্বভারতীয় সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত ঝাড়গ্রাম জেলায় মুন্ডা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবি জানানো হবে। তার আগে ঝাড়গ্রাম জেলার আটটি ব্লকে মুন্ডা পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

দেখা হচ্ছে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, তফসিলি উপজাতিভুক্তির শংসাপত্র আছে কিনা, সরকারি ভাতা বা পরিষেবা প্রাপক কিনা, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন কিনা, সমাজের কত শতাংশ ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকস্তরে পড়েছেন, কতজন চাকরিজীবী। সংগঠনের পশ্চিমঙ্গ রাজ্যের মুখপাত্র হিমাংশু সিংহ বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলায় যে সব মুন্ডা পরিবার রয়েছে তাদের অনেকেরই জাতিগত শংসাপত্র নেই। মুন্ডা শিশুরা মাতৃভাষায় পড়াশোনার সুযোগও পায় না। সমীক্ষা করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”

মুন্ডাদের আদি বাসস্থান ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল। উনিশ শতকের শেষে ইংরেজের অত্যাচারে পালিয়ে এসে বাংলা-ওডিশায় সুবর্ণরেখার পাড়ে আশ্রয় নেন মুন্ডাদের একাংশ। হিমাংশুবাবুর দাবি, সে কারণে অনেক মুন্ডার আদিবাসী হওয়ার প্রমাণ জাতিগত শংসাপত্র নেই। উনিশ শতকের শেষের দিকে ছোটনাগপুরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বিরসা মুন্ডা। ১৯০০ সালের ৯ জুন রাঁচির কারাগারে বিরসার মৃত্যুর পরে ইংরেজের অত্যাচার আরও বেড়ে যায়। তখনই মুন্ডা সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এ রাজ্যে পালিয়ে আসেন।

নব্বইয়ের দশকে ওড়িশার শিক্ষাব্রতী রুইদাস সিংহনাগ ‘মুন্ডারি বাণী’ লিপি তৈরি করেন। মুন্ডা সংগঠনের নিজস্ব উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম জেলায় ১৫টি অস্বীকৃত প্রাথমিক স্কুলে মুন্ডারি ভাষায় পড়ানো হয়। সারা ভারত মুন্ডা সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য স্বপন সিংহ বলেন, “সংগঠনগত ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের সমস্যা ও দাবির বিষয়গুলি জানানোর পাশাপাশি, শান্তিপূর্ণ ভাবে দাবি আদায়ের আন্দোলনও চলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন