ডেঙ্গি আক্রান্ত ১৮, হেলদোল নেই পুরসভার

জ্বর, মাথা ব্যথা, গাঁটে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বছর চল্লিশের সরস্বতী বেহেরা। গত রবিবার থেকে অসুস্থ সরস্বতী খড়্গপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লির ধানসিংহ ময়দানের রেলবস্তির বাসিন্দা। এনএস-১ রক্ত পরীক্ষা করে তাঁর শরীরে মিলেছিল ডেঙ্গির জীবাণু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৫
Share:

ধ্যান সিংহ ময়দানের সামনে জমে আবর্জনা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

জ্বর, মাথা ব্যথা, গাঁটে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বছর চল্লিশের সরস্বতী বেহেরা। গত রবিবার থেকে অসুস্থ সরস্বতী খড়্গপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লির ধানসিংহ ময়দানের রেলবস্তির বাসিন্দা। এনএস-১ রক্ত পরীক্ষা করে তাঁর শরীরে মিলেছিল ডেঙ্গির জীবাণু। আরও নিশ্চিত হতে তাঁর রক্তের নমুনা ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। শুক্রবার জানা গিয়েছে, ওই গৃহবধূ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।

Advertisement

শুধু সরস্বতী নন, খড়্গপুর শহরের আরও এক বালক-বালিকাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে খবর। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এই মুহূর্তে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত চারজনের চিকিৎসা চলছে মহকুমা হাসপাতালে। তার মধ্যে তিনজনই খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা। সরস্বতী বাদে বাকি দু’জন হল ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চর বছর বারোর বুদ্ধদেব দাস এবং ওই একই ওয়ার্ডের নিমপুরার বছর এগারোর বালিকা বি জে লক্ষ্মী। তিনজনই আপাতত বিপদ-মুক্ত বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

শহরে এ ভাবে ডেঙ্গি ছড়ানোয় উদ্বিগ্ন খড়্গপুরবাসী। একই সঙ্গে পুরসভার ভূমিকায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। গত ৩ অগস্ট পুরবোর্ডের মিটিংয়ে ঠিক হয়েছিল, ডেঙ্গি মোকাবিলায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত ব্লিচিং, মশা মারার তেল ও ধোঁয়া দেওয়া হবে। সেই মতো বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছেও গিয়েছে। কিন্তু নিয়ম মেনে সে সব দেওয়া হচ্ছে না বলেই অভিযোগ।

Advertisement

২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তলঝুলিতে যেমন বিভিন্ন স্থানে জল জমে রয়েছে। এলাকায় মশার দাপটও যথেষ্ট। অথচ ওই এলাকায় এখনও পর্যন্ত পুরসভার কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী আশিস দত্ত, গৃহবধূ কল্পনা ঝা বললেন, “ওয়ার্ডের নানা জায়গায় জল জমে রয়েছে। পুরসভা থেকে মশা মারার জন্য ব্লিচিং, তেল দেবে বলেছিল। কিন্তু কিছু দেওয়া হয়নি। খুব আতঙ্কে রয়েছি।”

রেল এলাকার মধ্যে থাকা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ ডেঙ্গি আক্রান্ত বালিকা বি জে লক্ষ্মীর মা বি সুধার। খোদ পুরপ্রধানের ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও আবর্জনা স্তূপ। ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ঘেঁষা খরিদা বাজার এলাকায় আবার নর্দমা মজে গিয়েছে, জমছে আবর্জনা। এখানেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় কোনও ব্যবস্থা ওয়ার্ডবাসীর চোখে পড়েনি। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের খরিদার বাসিন্দা ব্যাঙ্ককর্মী বৈজনাথ সিংহ, ব্যবসায়ী রমেশ সাহা বলেন, “পাশের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আবর্জনার স্তূপ। আমাদের ওয়ার্ডের বিভিন্ন অংশে জল জমে রয়েছে। কাউন্সিলর কোনও কাজ করছেন না। একটুও ব্লিচিং, মশা মারার তেল দেয়নি।”

কাউন্সিলরদের যুক্তি, পুরসভা থেকে পর্যাপ্ত ব্লিচিং, মশার তেল মিলছে না। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনিতা গুপ্ত বলেন, “আমরা এলাকায় ব্লিচিং, মশা মারার তেল দিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়েছে। পুরসভা যেটুকু ব্লিচিং ও তেল দিয়েছিল তাতে একদিনের বেশি এলাকায় দেওয়া সম্ভব নয়।”

পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার অবশ্য জানান, সরঞ্জাম কম পড়লে কাউন্সিলররা কর্মনিযুক্তি প্রকল্পের তহবিল থেকে কিনে নিতে পারেন। পাশাপাশি তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আমার ওয়ার্ড-সহ শহরের একটা বড় অংশ রেল এলাকা। সেখানে পরিকাঠামোর ঘাটতির জন্য আবর্জনা সাফাই করা যাচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement