ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে খড়্গপুর শহরে। এখনও পর্যন্ত খড়্গপুর পুর এলাকায় ২২ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে চারজন ডেঙ্গি আক্রান্ত খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সম্প্রতি পরিস্থিতি সামলাতে পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। এরপরেই নড়েচড়ে বসে পুরসভা। আজ মঙ্গলবার থেকে মশা দমনে শহরের সর্বত্র তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
গত জুনেই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ডেঙ্গি নিয়ে সমীক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে স্বাস্থ্য দফতর। ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (সুদা)-এর কর্মীদের দিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই সমীক্ষা চালায়। সেই সময় শহরের বেহাল নিকাশির দরুন মশার লার্ভার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে পুরসভা ও রেলকে সতর্ক করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। যদিও খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে সেই সমীক্ষা। অভিযোগ, মশা দমনে সে ভাবে কোনও পদক্ষেপই করেনি পুরসভা। যার ফল এখন শহরবাসীকে ভুগতে হচ্ছে। মশা বাহিত রোগের জেলা নোডাল অফিসার তথা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ডেঙ্গির মশার বংশবৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার জন্য মানুষ অনেকটা দায়ী। সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। সচেতন হয়ে মশা নিধন করা সকলের দায়িত্ব।”
খড়্গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে আটটি ওয়ার্ড রেল এলাকার অন্তর্ভুক্ত। রেল-পুরসভার টানাপোড়েনে ওই আটটি ওয়ার্ডে উন্নয়ন ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ। রেল এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রেল বাধা দিচ্ছে, এই অজুহাত দেখিয়ে পুরসভা এখানে কোনও কাজ করে না। আর রেলও উদাসীন। ভাঙা নিকাশি নালা, আবর্জনার স্তূপ থেকে মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি দেখে গত ৩ অগস্ট বৈঠক করে শহরের সব এলাকায় ধোঁয়া, তেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। তারপরে শহরের সর্বত্র তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে না অভিযোগ।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “খড়্গপুরে এখনও পর্যন্ত অনেকের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। তাই পুরসভাকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বৈঠকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশিকার কথা খড়্গপুর পুরসভাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির মশা দমনের বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
মশা দমনে তেল-ব্লিচিং ছড়ানোর জন্য ২০ জন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ করেছে পুরসভা। প্রতিদিন দু’জন করে শ্রমিক ১০টি করে ওয়ার্ডে ঘুরে মশানাশক তেল স্প্রে করবে। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এলে তাদের হাতেও মশা মারার তেল, ব্লিচিং তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
এ নিয়ে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “২০ জন শ্রমিক নিয়োগ করে শহর জুড়ে তেল, ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ করবে। মঙ্গলবার থেকেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা প্রচারে লিফলেট দেওয়া হয়েছে। পুর আধিকারিকেরা বিভিন্ন ফ্ল্যাট পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।” শহরের রেল এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দাবি করে পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত অধিকাংশের বাড়ি রেল এলাকায়। রেলের এলাকা পরিচ্ছন্ন করার জন্য ডিআরএমকে চিঠি দিয়েছি।” এ বিষয়ে রেলের ডিআরএম রাজকুমার মঙ্গলা বলেন, “রেল এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে লাগাতার সাফাই অভিযান চালাচ্ছি। প্রয়োজনে অভিযান বাড়ানো হবে।”