খড়্গপুর হাসপাতালে পরিকাঠামোয় খামতি

রোগীকে চাঙ্গা করতে বাজবে গান

গানের সুরে রোগীর চিকিৎসা নিয়ে সারা বিশ্ব নতুন করে ভাবছে। সেই ভাবনা সূত্রেই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হচ্ছে ‘মিউজিক সিস্টেম’-এর।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

হাসপাতালে পরিকাঠামোয় খামতির অভিযোগ রয়েছেই। ওয়ার্ডে ঘুরছে বিড়াল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

গানের সুরে রোগীর চিকিৎসা নিয়ে সারা বিশ্ব নতুন করে ভাবছে। সেই ভাবনা সূত্রেই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হচ্ছে ‘মিউজিক সিস্টেম’-এর।

Advertisement

কথা ছিল কালীপুজোর পরই চালু হয়ে যাবে ওই ব্যবস্থা। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে, জরুরি বিভাগের সামনে, বহির্বিভাগে, ওয়ার্ড মাস্টারের অফিসের কাছে বসানো হবে সাউন্ড বক্স। ওয়ার্ড মাস্টারের ঘর থেকে বাজানো হবে রবীন্দ্রসঙ্গীত। বাজবে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রচারও।

হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শে এই মিউজিক সিস্টেম বসানো হচ্ছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতে রোগীদের মানসিক ভাবে খানিকটা চাঙ্গা হবেন।” সুপার জানিয়েছেন সব মিলিয়ে প্রায় ১৬টি সাউন্ড বক্স লাগানো হচ্ছে। ব্যয় হবে প্রায় ৫০হাজার টাকা।

Advertisement

কিন্তু এই উদ্যোগে প্রশ্ন তুলেছেন রোগীরাই। অনেকেই বলছেন, হাসপাতালের শয্যার অভাব। প্রতিটি ওয়ার্ডে মেঝেতে শুয়ে থাকতে হয় রোগীকে। ওয়ার্ডে ঘোরাফেরা করে বিড়াল। পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব। নার্সে নেই। অপরিচ্ছন্ন চারপাশ। সে দিকে নজর না-দিয়ে রোগীদের বিনোদনের ব্যবস্থা করার কোনও প্রয়োজন ছিল না।

বসানো হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম ।

মেডিসিন, স্ত্রী-রোগ, সার্জারি, অস্ত্রোপচার-সহ ন’টি বড় ওয়ার্ড রয়েছে মহকুমা হাসপাতালে। এ ছাড়াও রয়েছে ছোট-ছোট বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এবং বহির্বিভাগ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদ রয়েছে ১৩০টি। কিন্তু এই হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ৫৭জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি শিফ্‌টে প্রয়োজন ৬ জন করে নার্স। তিনটি নাইট শিফটের বেশি কাজ করানোর নিয়ম নেই তাঁদের। সেই মতো হাসপাতালে সব মিলিয়ে ১৩৭জন নার্স থাকার কথা। রয়েছেন ১২২জন। যদিও জেএনএম নার্সের সংখ্যা মাত্র ১০২। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩৩০জন রোগী ভর্তি থাকেন। কিন্তু শয্যা রয়েছে ২৬০টি। ফলে সব সময়ই একাংশ রোগীকে মেঝেতে থাকতে হয়।

বিষয়টিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন না স্থানীয়রা। খড়্গপুরের ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পড়শি এক রোগীকে নিয়ে দিন কয়েক আগে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। একেবারে বেহাল অবস্থা। নোংরা পর্দা ঝুলছে। পরিকাঠামোয় এমন অভাবে রোগীর মানসিক অবস্থা আরও ভেঙে পড়বে। সাউন্ড বক্স লাগানোর আগে এ গুলি হওয়া প্রয়োজন।” হাসপাতালে ভর্তি থাকা নিত্যানন্দ চক্রবর্তী বলেন, “আগে হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করে সাউন্ড বক্স বসানো হোক। যে হাসপাতালে বিড়াল ঘুরে বেড়ায় সেখানে সাউন্ড বক্স শোভা পায় না।”

নার্স ও কর্মী সঙ্কটের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। তিনি মেনে নিয়েছেন পরিকাঠামো গত নানা অসুবিধাও রয়েছে। তেমন দাবি করেছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাও। তবু এই সঙ্গীতায়োজনের বিষয়টি নিয়ে তেমন নেতিবাচক কিছু দেখছেন না সুপার। তাঁর দাবি, ‘‘সামান্য ব্যয়েই তো এই বক্সগুলি বসানো হচ্ছে। তাতে যদি রোগীর কিছু ভাল হয়। এইটুকু টাকায় তো অন্য পরিষেবা বাড়ানো সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন