ছাত্রী খুনের অভিযোগ সত্ত্বেও হল না পুলিশ হেফাজত

কিন্তু অভিযোগ, পুলিশের সেই আবেদনে ত্রুটি ছিল। যার জেরে পুলিশি হেফাজতের বদলে অভিযুক্তের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক।

Advertisement

  নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৯
Share:

ধৃত সমীর সাহু। আদালতের পথে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

গভীর রাতে থানায় দায়ের হয়েছিল ছাত্রী খুনের অভিযোগ। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত কলেজ পড়ুয়া। নিজেদের হেফাজতে চেয়ে বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে তোলে পুলিশ। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশের সেই আবেদনে ত্রুটি ছিল। যার জেরে পুলিশি হেফাজতের বদলে অভিযুক্তের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক।

Advertisement

বুধবার পাঁশকুড়া স্টেশনের কাছে স্থানীয় মধুসূদন বাড়ের বাসিন্দা প্রেরণা মাইতিকে (১৭) সাইকেল থেকে চুলের মুঠি ধরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সমীর সাহু নামে এক কলেজ পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। ওই দিনই মৃত্যু হয় প্রেরণার। তার পরিবারের অভিযোগ, সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিল প্রেরণা। তার জেরেই সে মারা গিয়েছে। বুধবার রাতেই প্রেরণার মা ঊষারানি মাইতির অভিযোগের ভিত্তিতে সমীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পাঁশকুড়া পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবারের ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য তমলুক আদালতে সমীরকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় পুলিশ। কিন্তু ওই আবেদনপত্রে ত্রুটি থাকার কারণে বিচারক সমীরকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পাঁশকুড়া থানা সূত্রের খবর, পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদনপত্রে এসডিপিও’র সইয়ের প্রয়োজন। কিন্তু এ দিনের আবেদনপত্রে সেই সই ছিল না।

Advertisement

ওই ঘটনায় কার্যত হতাশ প্রেরণার পরিবার। প্রেরণার মামা স্বরূপ বাগ এ দিন বলেন, ‘‘এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আবেদনপত্রে ভুল থাকাটা খুবই দুঃখজনক। এতে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে।’’ যদিও পাঁশকুড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, আবেদনপত্রের ত্রুটি সংশোধন করে তারা আজ, শুক্রবার সমীরকে পুলিশি হেফাজতে চেয়ে ফের আদালতে আবেদন করবে। গোটা ব্যাপারে তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘অনিবার্য কারণবশত ওই আবেদনপত্রে সই ছিল না ঠিকই। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছি। শুক্রবার ফের আবেদন করা হবে।’’

বুধবার রাতেই তমলুক জেলা হাসপাতাল থেকে প্রেরণার দেহ পাঁশকুড়ায় তাদের মধুসূদন বাড়ের বাড়িতে এসে পৌঁছয়। কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার। এ দিন সকালে পাঁশকুড়া ব্রাডলিবার্ড হাইস্কুলের শিক্ষকরা প্রেরণার পরিবারে সঙ্গে দেখা করেন। ওই স্কুলেই দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল প্রেরণা।

অন্যদিকে, বুধবারের সকালের ঘটনার পরেই মোটরবাইক নিয়ে পাঁশকুড়ার রাধাবন গ্রামে নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছিল সমীর। এ দিন আদালতে যাওয়ার সময় সমীর বলেন, ‘‘আমি ওকে মারতে চাইনি। আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ওকে দাঁড়াতে বলি। ও না দাঁড়াতে ওকে ধরতে যাই, তখনই ও পড়ে যায়। লোকজন ছুটে আসায় আমি ওখান থেকে পালিয়ে যাই।’’

এর আগেও প্রেরণা উত্ত্যক্ত এবং হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল সমীরের বিরুদ্ধে। বাড়ির ছোট ছেলের কাণ্ডে বিস্মিত তার পরিবার। স্থানীয় সূত্রের খবর সমীরের দাদা সিভিক ভলান্টিয়ার শুকদেব সাহু কিডনির সমস্যায় গুরুতর অসুস্থ। সমীরের বাবা ক্ষুদিরাম সাহু এ দিন বলেন, ‘‘এক ছেলে অসুস্থ। আর একজন পুলিশের হাতে। আমরা ওকে অনেকবার সাবধান করেছি। কিন্তু ও এই কাণ্ড ঘটাবে, ভাবতে পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন