কন্যাশ্রীর সঙ্গে জুড়ে ‘বনশ্রী’ প্রকল্পের সূচনা হয়েছে আগেই। আবার রাজস্থানের পিপলান্ত্রির মডেলে বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে সদ্যোজাত কন্যাসন্তানের জন্য চারাগাছ উপহার দেওয়ার প্রকল্পও শুরু হয়েছে। সে প্রথা মানা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেও। উদ্দেশ্য একটাই কন্যা সন্তান রক্ষা এবং বন সৃজন।
এ বার পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর-২ ব্লকেও শুরু হল তেমনই এক প্রকল্প— ‘মা লক্ষ্মী’। নাবালিকার পড়াশোনার খরচ তুলতেই এই প্রকল্প। শর্ত একটাই পড়াশোনা করাতে হবে মেয়েকে। ১৮ বছরের আগে ওই নাবালিকার বিয়ে হয়ে গেলে বা সে পড়া ছেড়ে দিলে এই প্রকল্পের সুবিধা আর পাবে না পরিবার। বিডিও শুভজিৎ কুণ্ডু জানালেন, বছর দেড়েক আগে আড়গোয়াল প়ঞ্চায়েত এলাকায় এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। বুঝেছিলেন, অভাবের সংসারে মেয়েকে খাওয়াতে না-পেরে অনেক পরিবারই নাবালিকার বিয়ে দিয়ে দেন। ওই সব পরিবারে মেয়েকে প়ড়াশোনা করানোটা বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়। তাই নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রথমেই প্রয়োজন ওই মেয়েটির আর্থিক নিরাপত্তা।
সে কথা মাথায় রেখেই শুরু হয়েছে এই প্রকল্প। গত সপ্তাহেই পটাশপুর-২ ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। তার আগেই ব্লকের ২০টি হাইস্কুলের ১১০ জন ছাত্রীকে নিয়ে প্রথমধাপে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। গরিব পরিবারের এইসব ছাত্রীদের চিহ্নিত করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষই। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী গরিব স্কুলপড়ুয়া নাবালিকার পরিবারকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
বিডিও বলেন, ‘‘সরকারি খাস জমি, বিভিন্ন স্কুল চত্বর এবং রাস্তার দু’পাশে থাকা ফাঁকা জমি চিহ্নিত করে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বিভিন্ন গাছ লাগানো হচ্ছে। এই প্রকল্পেই অন্তর্ভূত করে নেওয়া হবে নাবালিকার পড়ুয়ার পরিবারকে।’’ প্রতিটি পরিবারকে ২৫০ টি করে গাছ দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির কাছেই দায়িত্ব পাবেন পরিবারের লোকেরা। ওইসব গাছে নিয়মিত জল, সার দেওয়া-সহ পরিচর্যা করতে হবে। সার বা অন্যান্য পরিচর্যার খরচ দেবে প্রশাসনই। তবে গাছ পরিচর্যার জন্য ওই পরিবার পাঁচ বছর ধরে মাসিক ২ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাবেন। পাঁচ বছর পর ওই গাছ গুলি বড় হলে সেগুলি বিক্রি করে ফেলতে পারবে নাবালিকার পরিবার। সেখান থেকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা পাবে রোজগার হবে। ওই টাকা নাবালিকার উচ্চ-শিক্ষা বা অন্য কাজে লাগাতে পারবে পরিবার। তবে এ জন্য ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে চুক্তি করে বৃক্ষপাট্টা দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া অন্তত ২০০টি গাছ রক্ষা করতে হবে।
শুভজিৎবাবু বলেন, ‘‘ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি প্রভৃতি গাছ লাগানো হচ্ছে। পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যেই এইসব গাছ বড় হয়ে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যায়। আর যেহেতু একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এটা করা হচ্ছে তাই টাকারও কোনও অভাব হবে না। উপরন্তু সরকারি খাস জমির সদ্ব্যবহার করে বনসৃজন হবে।’’ তৃণমূল পরিচালিত পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাহু বলেন, ‘‘রাজ্যে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছেন। ‘মা লক্ষ্মী প্রকল্প’ও মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে। এলাকার বিভিন্ন স্কুলের সাহায্য নিয়ে এই কাজ করছি।’’
বাগমারি নারীকল্যাণ শিক্ষা সদন গার্লস স্কুলের কাছে গাছ লাগানোর পর পরিচর্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শ্যামলি মিশ্রের পরিবারকে। শ্যামলির মা রুদ্রাণীদেবী বলেন, ‘‘অভাবের সংসাকের বড় মেয়ে দুলালি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়ে রাজি ছিল না। খুব ভুল হয়ে গিয়েছে।’’ তাই মেজ মেয়ে শ্যামলির বিয়ে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দিতে চান না তিনি। নিশ্চিত আয়ের ভরসা খুঁজে পাওয়ায় তিনি বলেন, ‘‘এতদিনে একটা ভরসার জায়গা পেলাম। সংসারও চলবে, মেয়ের পড়াশোনাও।