ভ্রমণ: প্রচীন নীলকুঠির কাছেই তৈরি হয়েছে পর্যটক আবাস। নিজস্ব চিত্র
সুবর্ণরেখার তীরে এ আর এক ‘সুবর্ণরেখা’! এ বার শীতে ঝাড়গ্রাম জেলায় বেড়ানোর নতুন ঠিকানা। সুদশ্য এই সরকারি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রের একদিকে সুবর্ণরেখা নদীর সৌন্দর্য আর একদিকে ইতিহাসের নীলকুঠি। আধুনিক বিনোদনের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি চা বাগান, ইকো পার্কও পর্যটকদের আনন্দ দেবে। তা ছাড়া, কাছেই রয়েছে কালী মন্দির ও রামকষ্ণ আশ্রম। সব দিক মিলিয়ে নির্জনে ছুটি কাটানোর জন্য জায়গাটি একেবারে আদর্শ। ইচ্ছে হলে সুবর্ণরেখার জলে ছিপ ফেলে মাছও ধরতে পারেন পর্যটকেরা।
বেলিয়াবেড়া ব্লকের কুলিয়ানা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুঠিঘাট এলাকায় রয়েছে প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ। বেলিয়াবেড়া পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ইতিহাসের সেই নীলকুঠি লাগোয়া এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে এলাকার স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যদের বিকল্প রোজগারের বন্দোবস্তও করা গিয়েছে। সুবর্ণরেখার ধারে তৈরি করা হয়েছে দোতলা প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটি। নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুবর্ণরেখা’। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে এই কেন্দ্র। দোতলার বারান্দা থেকে চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পাবেন পর্যটকরা। এ ছাড়া, ঘরের জানলা দিয়েও দেখা যাবে সুবর্ণরেখা নদী, নীলকুঠি আর সেগুন গাছের জঙ্গল। প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের। ঘরভাড়াও সাধারণের নাগালের মধ্যেই।
জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যান (জেএপি) এবং পঞ্চায়েত সমিতির অন্যান্য তহবিল মিলিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে আনন্দধারা প্রকল্পে সুদৃশ্য দোতলা ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। ভবনের একতলায় একটি ঘরে এবং দোতলার তিনটি ঘরে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝাঁ চকচকে চারটি ঘরের সঙ্গেই রয়েছে রাথরুম। রয়েছে বাতানুকূল ব্যবস্থাও। প্রতিটি ঘরে দু’জন করে থাকতে পারবেন। দু’জনের অতিরিক্ত থাকলে আলাদা শয্যার ভাড়া দিতে হবে। পর্যটকদের খাওয়াদাওয়া, ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের দায়িত্বে রয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা।
একতলায় স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার জন্য সেমিনার হল রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে গোষ্ঠীর সদস্যদের থাকার জায়গা ও রান্নাঘর। বেলিয়াবেড়ার বিডিও কৌশিক ঘোষ বলেন, “এলাকার বহু মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রোজগারের স্থায়ী বন্দোবস্ত করার জন্য প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটি চালু করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, ব্লকের সরকারি ওয়েবসাইট (www.gopiballavpur-2.com) এবং পযর্টন সংস্থা ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম-এর (www.jhargramtourism.com) মাধ্যমে ঘর বুকিং করা যাবে। ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “ইতিমধ্যেই বহু পর্যটক অগ্রিং বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ শুরু করেছেন। ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রকৃতির মাঝে পর্যটকদের স্বল্প মূল্যে থাকার জন্য সরকারি স্তরে এমন উদ্যোগ আরও বেশি করে প্রয়োজন।”