ঝাড়গ্রামে চেনা ছন্দেই এমপিএস

২৪ ঘন্টার মধ্যে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা এমপিএস-এর সব ক’টি অফিস বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার ওই নির্দেশ জারির পর ঝাড়গ্রামের দিঘিশোলে সংস্থার বহুমুখি কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক ভবনে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছিল। মঙ্গলবারও সেই ছবির কোনও পরিবর্তন হয় নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০২
Share:

ঝাড়গ্রামের দিঘিশোলে এমপিএস-এর মূল কেন্দ্রটি খোলা রয়েছে। রয়েছে সশস্ত্র পুলিশও। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

২৪ ঘন্টার মধ্যে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা এমপিএস-এর সব ক’টি অফিস বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার ওই নির্দেশ জারির পর ঝাড়গ্রামের দিঘিশোলে সংস্থার বহুমুখি কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক ভবনে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছিল। মঙ্গলবারও সেই ছবির কোনও পরিবর্তন হয় নি। তবে সংস্থার চত্বরে ও চারপাশে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ দিনও খোলা ছিল সংস্থার কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।

Advertisement

এমপিএস সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এই কৃষি খামারে ৫৮ জন স্থায়ী কর্মী ও ৬৭ জন অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগটির একটি অংশ চালু রয়েছে। মিনারেল ওয়াটার প্রকল্পটিও চালু রয়েছে। রিসোর্টটি খোলা থাকলেও কোনও আবাসিক নেই। এমপিএস-এর কৃষিখামারে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দু’টি শিফ্টে শ্রমিকরা যথারীতি কাজ করেছেন। তবে সকলেরই মুখ ছিল থমথমে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগের কর্মী প্রদীপ বিশাল, ভাগবত মাণ্ডি, মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্টের শ্রমিক শেখ আজিজ, বাগানে ঘাস কাটার শ্রমিক ছবি গোয়ালা-রা জানালেন, টিভি ও সংবাদপত্র মারফত তাঁরা হাইকোর্টের নির্দেশের কথা শুনেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, “এমপিএস বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের সংসার চলবে কি করে? আমরা খাব কী?” কর্মীরা জানালেন, কর্তৃপক্ষের তরফে কাউকে কাজে আসতে বারণ করা হয় নি। তাই তাঁরা কাজ করেছেন। বুধবারও কাজে আসবেন বলেও জানালেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, হাইকোর্ট নির্দেশ জারি করার পরই সোমবার সন্ধ্যা থেকে এমপিএস-এর চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে কোর্টের কোনও নির্দেশ না আসায় সংস্থার ঝাড়গ্রাম অফিস বন্ধ করার জন্য পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয় নি। হাইকোর্ট অবশ্য এমপিএস-এর ঝাড়গ্রাম অফিস বন্ধ করার জন্য ঝাড়গ্রামের এসপি’কে নির্দেশ দিয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন, সংস্থার অফিস বন্ধ করার নির্দেশ এখনও পর্যন্ত তিনি পান নি।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে বিনপুর থানার দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘিশোল মৌজায় চারশো একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এমপিএস-এর বহুমুখি কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক ভবন। ১৯৯৩ সালে কৃষি খামারটির কাজ শুরু হয়। ক্রমে বিশাল ওই এলাকায় ছাগল, গরু, মুরগি, শুয়োর পালন, মাছ চাষ এবং জৈবসার ব্যবহার করে বিভিন্ন শাক সব্জি ও ফলের বিশাল বাগান গড়ে তোলা হয়। মিনারেল ওয়াটার তৈরিরও প্ল্যান্ট ছিল। এমপিএস-এর ওই খামারের ভিতরেই রয়েছে বিশাল বিলাস বহুল রিসোর্ট, একাধিক রেস্টুরেন্ট ও আমোদ প্রমোদ ও মনোরঞ্জনের এলাহী আয়োজন। এমপিএস-এর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগও রয়েছে এখানে। অভিযোগ, ওই কর্মকাণ্ড দেখিয়েই টাকা তুলত এমপিএস।

গত ২০ জানুয়ারি ঝাড়গ্রামে এমপিএস-এর কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক ভবনে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সেখানে টানা আট ঘন্টা তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন সিবিআই অফিসারেরা। ইতিপূর্বে একাধিক বার সেবি-র অফিসারেরা এই কৃষিখামারে ও বাণিজ্যিক ভবনে তল্লাশি চালিয়ে গিয়েছেন।

এমপিএস-এর দিঘিশোলের প্রকল্পটির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তপন দাস বলেন, “এখনও পর্যন্ত সিবিআই বা পুলিশের কেউ সংস্থা বন্ধ করতে আসেননি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন