এবড়ো খেবড়ো মাঠে খেলাই দায়। ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র
ভরসা মিলেছিল দিন দশেক আগেই! বিজেপির তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা মিটলেই, দলের তরফে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। কিন্তু আশ্বাস থমকে আশ্বাসেই! ৬ মে-র পর প্রায় দু’সপ্তাহ কাটতে চলল, স্টেডিয়াম বেহাল।
সরকারি মাঠে কোনও রাজনৈতিক দলের সভা হওয়ারই কথা নয়। তাহলে মোদী সভা করলেন কী ভাবে? আসলে প্রধানমন্ত্রীর ভিভিআইপি’র নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বিজেপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্টেডিয়ামে সভা করার অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। কলকাতার বড় একটি সংস্থাকে বরাত দিয়ে মাঠের এক লক্ষ ২০ হাজার বর্গফুট এলাকায় জার্মান হ্যাকার পদ্ধতিতে সভাস্থল তৈরি হয়েছিল। সে জন্য সারা মাঠ জুড়ে অজস্র গর্ত করা হয়েছিল। সভার শেষে বিজেপি’র উদ্যোগে মাঠের আবর্জনা কিছুটা পরিষ্কার করা হলেও, মাঠের গর্তগুলো ভরাট করা হয়নি। ছোট বড় গর্ত ছড়িয়ে সর্বত্র। ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র পেরেকের টুকরো। প্রাতর্ভ্রমণকারী সায়ন্তন রায়, দুলাল সরকার বলছিলেন, ‘‘স্টেডিয়ামের মাঠে হাঁটতে গিয়ে গর্তে পড়ে পা’য়ে চোট পাচ্ছি।’’ এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণও করছেন তাঁরা।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই স্টেডিয়ামের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ঝাড়গ্রাম মহাকুমা ক্রীড়া সংস্থা। ২০১১’য় রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর, ২০১২ সালে প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে স্টেডিয়ামের মাঠের সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ হয়। তারপর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরে প্রশাসনিক জনসভা করলে, প্রতিবারই সভাস্থলের জন্য এই স্টেডিয়ামকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। গত বছর ৯ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর সভার কারণে মাঠ বেহাল হয়ে যাওয়ায়, ঝাড়গ্রাম ফুটবল লিগের খেলাগুলি অন্যত্র সরাতে হয়েছিল। এবার মোদীর সভা শেষেও মাঠের অবস্থা বেশ খারাপ। ঝাড়গ্রাম মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম-সম্পাদক অমিত হাজরা বলেন, ‘‘স্টেডিয়ামের মাঠ খেলাধুলা, অনুশীলন ও হাঁটাচলার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। আমরা মাঠে সভা করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্টেডিয়ামের মাঠ ব্যবহার করতে দেয় প্রশাসন। সভার পরে মাঠটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল উদ্যোক্তাদের। মাঠের অবস্থা খারাপ থাকায় জেলা ক্রীড়ায় যোগ দেওয়ার মহকুমাস্তরের বাছাই পর্বের খেলাধুলো করানো যাচ্ছে না।’’
কেন বারবার জেলা শহরের ঐতিহ্যপূর্ণ স্টেডিয়ামের মাঠকে ধ্বংস করা হচ্ছে? প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসীর একাংশ। স্টেডিয়ামের পরিবর্তে অন্য কোনও মাঠে সরকারি ও রাজনৈতিক সভার স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির দাবি করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। বিজেপি’র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘সভা শেষ হওয়ার পরেই দিনই মাঠের আবর্জনা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। সভাস্থলের কাঠামো ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গর্ত বুঁজিয়ে মাঠ সমান করে দেওয়া হবে।’’