পাছে ভাঙে, পড়ার ফাঁকে ছাদে চোখ

তিন বছর আগে ভূমিকম্পে একাধিক স্কুলের ছাদ, দেওয়ালে বিপজ্জনক ফাটল তৈরি হয়েছিল। কোথাও সংস্কার, কোথাও নতুন ভবন তৈরির জন্য স্কুলগুলির তরফে প্রশাসনের কাছে আর্থিক বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়েছিল। এখনও তা না মেলায় বিপদ মাথায় নিয়েই চলছে ক্লাস। বিপন্ন শিক্ষক থেকে পড়ুয়া। আশঙ্কায় অভিভাবকেরাও। তমলুক মহকুমার সেই সব স্কুল দেখে এল আনন্দবাজার। অভিভাবকদের অভিযোগ, ছেলেমেয়েদের মুখে ক্লাসঘরের অবস্থা শুনে ভয় হয়। যে কোনও সময় বড় বিপদ হতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫২
Share:

খণ্ডহর: নন্দকুমার ব্লকের রাজনগর রামচন্দ্র আদর্শ বিদ্যাপীঠ।

ক্লাসে পড়াচ্ছেন স্যার। অথচ চাইলেও সে দিকে মন দিতে পারছে না অণ্বেষা ভৌমিক, সুপর্ণা ভুঁইয়ারা। মাঝেমধ্যেই চোখে চলে যাচ্ছে উপরে ফাটল ধরা ছাদে। কখন উপর থেকে চাঙড় মাথায় খসে পড়ে সেই আশঙ্কা। কখনও চাঙড় খসে পড়লে সরে বসতে হচ্ছে।

Advertisement

ভাঙাচোরা এমন শ্রেণিকক্ষেই প্রতিদিন ক্লাস করতে হচ্ছে নন্দকুমার ব্লকের রাজনগর রামচন্দ্র আদর্শ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের কয়েকশো পড়ুয়াকে। ২০১৫ সালে এপ্রিল মাসে ভূমিকম্পে স্কুলের পুরনো ভবনের অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষেরই প্রায় ভগ্নদশা। কিন্তু উপায় না থাকায় ওই অবস্থাতেই পড়াশোনা চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অভিভাবকদের অভিযোগ, ছেলেমেয়েদের মুখে ক্লাসঘরের অবস্থা শুনে ভয় হয়। যে কোনও সময় বড় বিপদ হতে পারে।’’

ভাঙাচোরা ভবনের পরিবর্তে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে জেলা শিক্ষা দফতর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আবেদন জানানো হলেও এখনও কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে পুরনো তিনতলা ভবনের ১৮ টি শ্রেণিকক্ষের অধিকাংশই বিপজ্জনক অবস্থায়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েচে, দুর্ঘটনা রুখতে ভবনের দোতলার বারান্দার ছাদের একাংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে প্র্যাক্টিক্যাল রুমে।

Advertisement

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে খবর, স্কুল তৈরি হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। প্রথমে নির্মিত পাকা ভবনটি প্রায় ৫০ বছরের পুরনো। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ভূমিকম্পে তিনতলা ওই ভবনের অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ও সংলগ্ন বারান্দার ছাদে ফাটল ধরে। কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে প্রায় ১৮০০ পড়ুয়ার মধ্যে কয়েকশো পড়ুয়ার বসার ব্যবস্থা করতে সমস্যা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পঠনপাঠনেও।

স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পুরনেো ভবনের ক্লাস রুম ও বারান্দার ছাদের অধিকাংশ জায়গায় ফাটল ধরে ও চাঙড় খসে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবু তার মধ্যেও কিছু শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সাঁতরা বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছর আগে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কারের জন্য জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। সংস্কারের জন্য গত বছর ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু ততদিনে ভবনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ায় সংস্কারের বদলে নতুন করে নির্মাণের জন্য ১কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা চেয়ে জেলা ও রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরে আবেদন জানাই। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর আর কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে প্রশাসন দ্রুত আর্থিক বরাদ্দের জন্য ব্যবস্থা নিক এটাই আমাদের দাবি।’’

নবম শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা ভৌমিক, সুপর্ণা ভুঁইয়া জানায়, পড়ার ফাঁকে মাঝেমাঝেই ভয়ে উপরে ছাদের দিকে তাকাতে হয়। কখন চাঙড় খসে পড়ে! ইংরেজির শিক্ষক তপনকুমার আচার্য বলেন, ‘‘মাথার উপর ফাটা ছাদে নজর রাখতে রাখতে পড়াতে হয়। সব সময় আশঙ্কায় থাকি।’’ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তথা তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি অনুপকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরনো ভবন সংস্কারের বদলে নতুন ভবন নির্মাণে আর্থিক সাহায্যের জন্য চেষ্টা চলছে।’’ চলবে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন