ভাঙা: ঘাটালে এটিএম কাউন্টারে নেই দরজার পাল্লা। এ ভাবেই টাকা তোলা। নিজস্ব চিত্র
চিত্র এক: দিন কয়েক আগে মেয়েকে নিয়ে ঘাটাল শহরে সব্জিবাজার সংলগ্ন এটিএমে ঢুকেছিলেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। সবে ব্যাগ থেকে এটিএম কার্ড বার করবেন, সেই সময় জনা চারেক যুবক ঢুকে পড়েন এটিএমের ভিতরে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে টাকা না তুলেই এটিএম থেকে বেরিয়ে যান অনন্যাদেবী।
চিত্র দুই: গত সোমবার ঘাটাল শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন দাসপুরের যুবক সুজয় ঘোষ। সুজয়বাবু টাকা তোলার আগেই মাঝবয়সী তিন জন ব্যক্তি চোখ রাঙিয়ে সুজয়বাবুকে দ্রুত টাকা তুলতে বলেন। বিপদ বুঝে সুজয়বাবু দ্রুত কাউন্টার ছেড়ে চলে যান।
বলা বাহুল্য, দু’টি ক্ষেত্রেই এটিএমে কোনও নিরাপত্তা রক্ষী ছিলেন না। শুধু তাই নয়, অনেক এটিএম কাউন্টারের দরজাও ভাঙা। এই গাফিলতির ফল ভোগেন অনন্যাদেবী বা সুজয়বাবুর মতো সাধারণ মানুষ।
শনিবার রাতে দাসপুরের গৌরার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম লুঠের চেষ্টা চালায় দুষ্কৃতীরা। দিন কয়েক আগেই খড়্গপুরের একটি এটিএমের ভল্ট থেকে লক্ষাধিক টাকা লুঠের ঘটনা ঘটে। তারপরেও যে হুঁশ ফেরেনি ঘাটাল শহরের এটিএমগুলিতে ঘুরলেই তার প্রমাণ মিলবে।
ঘাটাল শহর-সহ গোটা মহকুমায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক মিলিয়ে প্রায় ৪০টি এটিএম রয়েছে। যদিও এর মধ্যে অধিকাংশ এটিএমেই নেই নিরাপত্তা রক্ষী। এমনকী অনেক এটিএমে নেই পর্যাপ্ত আলোও। ফলে রাতে টাকার প্রয়োজন হলে অনেকেই এটিএমে গিয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ব্যাঙ্কে লম্বা লাইনের ঝক্কি এড়িয়ে সহজে টাকা তুলতে গ্রাহকদের এটিএম ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ ঘাটালের মতো জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের এটিএমগুলির পরিকাঠামোর হাল খারাপ।
অনন্যাদেবীর অভিযোগ, “শহরের সব্জিবাজার সংলগ্ন এটিএমের দরজা ভাঙা। প্রহরীও নেই। অনেক সময় মদ খেয়েও অনেকে এটিএমের ভিতরে ঢুকে পড়ে। কোনও নিরাপত্তাই নেই।” সমস্যার কথা মানছেন জেলার এক পুলিশ আধিকারিকও। তিনি বলছেন, “এটিএমের নিরাপত্তারক্ষী-সহ পরিকাঠামোর বিষয়টি পুরোপুরি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দেখার কথা। রাস্তায় পুলিশি টহল থাকে। পুলিশ তো আর এটিএমে গিয়ে গার্ড দেবে না।”
ঘাটাল শহরের কোন্নগরের এক কলেজ পড়ুয়া দীপ্তি মণ্ডল খানিকটা ক্ষোভের সুরেই বলছেন, “নির্দিষ্ট নিয়মের থেকে বেশি বার এটিএম থেকে থেকে টাকা তুললেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে ব্যাঙ্ক। অথচ গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের চিন্তা নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিরাপত্তা রক্ষী না থাকায় এটিএম কাউন্টারের ভিতরে কেউ থাকলেও অনেকে ঢুকে পড়ছেন। মেশিন থেকে টাকা তোলার পর শান্তিতে টাকা গোনাও যায় না।’’
এ নিয়ে ঘাটাল শহরের ইউবিআই ব্যাঙ্কের ঘাটালের মুখ্য প্রবন্ধক ক্রুষ্ণাচন্দ্র জেনা এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র ঘাটালের চিফ ম্যানেজার সুব্রত বিশ্বাস বলছেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্ত এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী রাখার ব্যবস্থা করা হবে।”