এই সৈকতে পর্যটক আসে কম, যুক্তি পুলিশের
Mandarmani

নিরাপত্তায় হাতিয়ার একা নুলিয়া

পরিকাঠামো, বিনোদনের বন্দোবস্ত থেকে নিরাপত্তা— সব আয়োজনই যেন দিঘায়। অথচ পূর্ব মেদিনীপুরের বাকি সৈকতেও এখন বছরভর ভিড় লেগে রয়েছে। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। তবু মন্দারমণি, তাজপুর, শংকরপুরে তেমন নজর নেই প্রশাসনের। অসন্তুষ্ট পর্যটকেরাও। ঠিক কেমন অবস্থা এই সব দুয়োরানি সৈকতের— খোঁজ নিল আনন্দবাজার। জোয়ারে ঢেউয়ের ধাক্কায় বিপজ্জনক সমুদ্রসৈকত। নিরাপত্তা নেই একেবারেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শঙ্করপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪১
Share:

জোয়ারে ঢেউয়ের ধাক্কায় বিপজ্জনক সৈকত। নিজস্ব চিত্র

বছরখানেক আগে শঙ্করপুরে এসেছিলেন সল্টলেকের বাসিন্দা শুভাশিস দাস অধিকারী। এ বছর ফের সেখানেই এসেছেন তিনি। কিন্তু এবার সমুদ্র এবং সৈকতের চরিত্রগত পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়েছে তাঁর। শুধু শুভাশিসবাবু নন, আরও বহু পর্যটকের চোখে দেখে মনে হয়েছে, শঙ্করপুরে সমুদ্র যেন অনেকটাই এগিয়ে এসেছে উপকূলের দিকে। অল্প জোয়ারেও গার্ডওয়ালে আছড়ে পড়ছে ঢেউ।

Advertisement

একই কথা জেলা পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর মুখে। তিনিও জানাচ্ছেন, শঙ্করপুরে সমুদ্র অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। স্থানীয়দেরও দাবি, এতে সমুদ্রে স্নান করা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে শঙ্করপুরের সৈকতে নজরদারি বা পর্যটকদের নিরাপত্তা কি বেড়েছে?

স্থানীয় সূত্রের খবর, শঙ্করপুরে সমুদ্র স্নানের জন্য দু’টি ঘাট রয়েছে— ‘অশোক ঘাট’ এবং ‘নেস্ট ঘাট’। সেখানে দুর্ঘটনা রোখার জন্য রয়েছেন মাত্র একজন নুলিয়া এবং জনা সাতেক সিভিক ভলন্টিয়ার। কোনও বিপদের সময় বা জলোচ্ছ্বাসের সময় দিঘার সৈকতে লাগানো মাইকে সাইরেন বাজিয়ে পর্যটকদের সতর্ক করা হয়। শংকরপুরে দেখা গিয়েছে, এখানের সৈকতে মাইক বা সাইরেন বাজানোর কোনও বালাই নেই। এখানের সবেধন নীলমণি একমাত্র নুলিয়াই হ্যান্ডমাইক নিয়ে সেই কাজটা করেন।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে সপরিবারে শঙ্করপুর এসেছিলেন ধীমান সাধু খাঁ। সৈকতের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “এখানে দেখছি সমুদ্র বেশি উত্তাল। কিন্তু একজন মাত্র নুলিয়া। তাই পরিজন এবং ছোটদের নিয়ে সমুদ্রে নামতে সাহস পাচ্ছি না।’’ আবার বারাসতের বাসিন্দা রাজীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিঘার পর শঙ্করপুর ঘুরতে এবং স্নান করতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে তো দিঘার মতো নিরাপত্তা নেই। তার উপর সমুদ্রের ঢেউ বেশি বলে মনে হচ্ছে। তাই দিঘা ফিরে যাচ্ছি।’’

সল্টলেক থেকে আসা পর্যটক শুভাশিসবাবু কথায়, ‘‘গতবার যখন এসেছিলাম, তখন সৈকত অনেকটা চওড়া ছিল। স্নানও করেছিলাম। কিন্তু এবার চিত্রটা বদলেছে বলে মনে হচ্ছে।’’

দিঘা এবং মন্দারমণির মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত শঙ্করপুরে চলতি বছরে পর্যটকের সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পর্যটকদের একাংশের প্রশ্ন, সেই কারণেই কি এখানে কম নজরদারি!

পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, দিঘার মতো এখানেও সৈকতে নজরদারির জন্য দু’টি কংক্রিটের ওয়াচ টাওয়ার বানানো হচ্ছে। সেই টাওয়ার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। কাজ শেষ হলেই সেখানে নিরাপত্তারক্ষী রাখা হবে বলে জানিয়েছে মন্দারমণি কোস্টাল থানার পুলিশ।

শঙ্করপুর যে নিরাপত্তার ব্যাপারে অবহেলিত, তা তারা মানতে রাজি নন। তাদের দাবি, মন্দারমণি বা দিঘার তুলনায় খুব কম সংখ্যক পর্যটক শঙ্করপুরে যান। আর সমুদ্র কাছে চলে আসায় বেশি পর্যটক এখানে স্নানে নামেন না। কিন্তু পুলিশের নজর রয়েছে পুরোদমেই। জোয়ারের সময় পর্যটকদের সমুদ্রে নামার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর ভাটার সময় মাত্র হাঁটুজল পর্যন্ত নামার অনুমতিই রয়েছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “শঙ্করপুরে সমুদ্র এগিয়ে এসেছে। তাই জোয়ারের বা জলোচ্ছ্বাসের সময় সমুদ্রের ধারে পর্যটকদের যেতে দেওয়া হয় না। আগামী দিনে দিঘার মতো, এখানেও নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’

দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পরিচালন কমিটির সদস্য অখিল গিরি বলেন, ‘‘শঙ্করপুরে পর্যটকেরা খুব একটা স্নান করেন না। তাই নুলিয়া কম। তাছাড়া, ঢেলে সাজানো হচ্ছে ওই পর্যটন কেন্দ্র। তাই কাজের মাঝপথে নয়, শেষে মন্তব্য করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন