তমলুক ও পাঁশকুড়া

জলকরে না, দুই পুরসভায় আয়-সঙ্কট

যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন তখনও তিনি ছিলেন জল করের বিপক্ষে। এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি সেই অবস্থানে অনড়। জল সরবরাহের জন্য বাসিন্দাদের থেকে জল কর আদায় করা যাবে না বলে পুরপ্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০২:০১
Share:

যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন তখনও তিনি ছিলেন জল করের বিপক্ষে। এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি সেই অবস্থানে অনড়। জল সরবরাহের জন্য বাসিন্দাদের থেকে জল কর আদায় করা যাবে না বলে পুরপ্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা মেনে তমলুক পুরসভা এলাকায় জল কর আদায় ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাঁশকুড়া পুরসভায় সবেমাত্র পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর জন্য বাসিন্দাদের জল-সংযোগ দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা শুরু হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু বাসিন্দাদের কাছ থেকে জলকর আদায় ছাড়া ব্যবস্থা কী ভাবে চালু রাখা যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দুই পুরসভা কর্তৃপক্ষই। কারণ পুরসভার নিজস্ব আয় বলতে বাসিন্দাদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়া বড় কোন আয়ের পথ নেই। তাই জল সরবরাহের মত জরুরি ও ব্যয় বহুল পরিষেবা দেওয়া নিয়ে বিকল্প আয়ের মাধ্যমে অর্থ সংস্থান করতে চাইছে পুরসভা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ তো অমান্য করা যায় না। ফলে উভয় সঙ্কটে পুরসভা।

তমলুক পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার অন্যতম প্রাচীন এই পুরসভার বাসিন্দাদের জল সরবরাহের দায়িত্বে আগে ছিল রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর। সে সময় জনস্বাস্থ্য দফতর জল সরবরাহের জন্য পুরসভার বাসিন্দাদের কাছ থেকে জল কর আদায় করত। ৩০ বছর আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের হাত থেকে শহরের বাসিন্দাদের পানীয় জল সরবরাহের দায়িত্ব নেয় তমলুক পুরসভা কর্তৃপক্ষ। জল সরবরাহের জন্য পুরসভা বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে জল কর আদায় করে আসছে। বর্তমানে শহরের দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা (বিপিএল) ও সাধারণ পরিবারের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০ টাকা করে জলকর হিসেবে নেওয়া হয়। বাণিজ্যিক জল-সংযোগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ টাকা ও হোটেলগুলির কাছ থেকে ৬০ টাকা করে জল কর নেওয়া হয়ে থাকে।

Advertisement

সম্প্রতি পুরপ্রধানদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ, পুরসভার সাধারণ বাসিন্দাদের কাছ থেকে জলকর নেওয়া যাবে না। এই পরিস্থিতিতে শহরের জল সরবরাহ চালু রাখার জন্য অর্থের সংস্থান নিয়ে চিন্তায় জলকর আদায় করে আসা তমলুক পুরসভা।

তমলুক পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরে বর্তমানে প্রায় ৫৪ হাজারের বেশি বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের জন্য জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে ভূগর্ভস্থ জল তোলার জন্য বেশ কয়েকটি পাম্প হাউস রয়েছে। এইসব পাম্প চালানোর জন্য ও বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেল বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে থাকে। যা জলকর বাবদ আয়ের থেকে অনেকটা কম। এজন্য পুরসভার নিজস্ব আয়ের একাংশ ও জল সরবরাহের জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া একাংশ আর্থিক সাহায্য দিয়ে চালাতে হয়। জলকর আদায় বাবদ আয় কমলে ওই টাকার সংস্থান কিভাবে হবে তা নিয়ে এখনও জানানো হয়নি। যেহেতু তমলুক শহরের মত গ্রামীণ পুরসভার নিজস্ব আয় করার সুযোগ কম তাই ওই আয় থেকে জল সরবরাহ খাতে বাড়তি অর্থ খরচ করা বেশ সমস্যা বলে জানিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য অর্থ সংস্থান নিয়ে পুরসভা কতৃপক্ষের উদ্বেগ বেড়েছে।

তমলুক পুরসভা এলাকায় জল সরবরাহে প্রতি বছর খরচ হয় ২ কোটি ৪৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। আর জলকর বাবদ আয় হয় ৪৫ লক্ষ টাকা। আর ২৫ লক্ষ টাকা আসেল রাজ্য সরকারের তরফে। বাকি খরচ বইতে হয় পুরসভাকেই। তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন অবশ্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে সাধারণ বাসিন্দাদের থেকে পুরসভায় ধাপেধাপে জলকর আদায় বন্ধ করা হবে। ফলে পুরসভার আয় কমবে। তবে জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য আরও অর্থ সংস্থানের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানানো হবে।’’

একই পরিস্থিতি জেলার নবগঠিত পাঁশকুড়া পুরসভায়। ২০০২ সালে গঠিত এই পুরসভা এলাকায় এতদিন সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে বাসিন্দাদের দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে পুরসভার বাসিন্দাদের পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলসরবরাহ চালু করতে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন জল সরবরাহ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। পাঁশকুড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার বাড়ি রয়েছে। শহরে নতুন জল-সংযোগের জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ৩ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। নতুন এই জল-সংযোগের জন্য দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারের কাছ থেকে এককালীন ৩ হাজার, সাধারণ বাসিন্দাদের কাছ থেকে ৫ হাজার ও বানিজ্যিক জল-সংযোগের জন্য ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে । আগামী জুলাই মাস থেকে পুরসভার ওই পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা শুরু হবে।

পাঁশকুড়া পুরসভায় অবশ্য ছবিটা একটু আলাদা। আগামী অগস্ট মাসে এখানে জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা। কিন্তু জলসরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে যে খরচ হবে তাঁর অর্থ সংস্থান হবে কীভাবে ? পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খানের উত্তর, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই বাসিন্দাদের কাছ থেকে জলকর আদায় করব না। ফলে জলকর বাবদ আয় হবে না। পুরসভার নিজস্ব আয়ের একাংশ ওই খাতে খরচ করা হবে। এজন্য পুরসভার নিজস্ব আয় বাড়াতে বিকল্প আয়ের পথগুলি খোঁজা হবে।’’

কিন্তু এই বিকল্প আয়ের উৎস পাওয়া যে বেশ কঠিন তা মানছেন দুই পুরপ্রধানই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন